নারায়ণগঞ্জে লোডশেডিংয়ে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত, গরমে ভোগান্তি 

এভাবে চলতে থাকলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকেরা। দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

লোডশেডিং
প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ভাই ভাই স্পিনিং মিলে প্রতিদিন তুলা থেকে সুতা উৎপাদনের ক্ষমতা ১৭০ টন। কিন্তু বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ থেকে ১০০ টন। প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় ছয় হাজার শ্রমিকের বেতন ও কারখানার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।

উপজেলার ব্রাহ্মনদী ইউনিয়নের উজান গোবিন্দী বিনাইয়ের চর এলাকায় ভাই ভাই স্পিনিং মিলটি অবস্থিত। এই মিলে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। মিলের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা তাঁদের মিলে বিদ্যুৎ ছিল না। লোডশেডিংয়ের কারণে মিলের প্রতিদিন উৎপাদনক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমে গেছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।

বিদ্যুতের প্রসঙ্গ উঠতেই আড়াইহাজার উপজেলা সদরের বাসিন্দা মালা রানী দেব বলেন, ‘প্রতিদিন সাত-আটবার বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎ না থাকলে মানুষ ঘরে থাকে কীভাবে? সদরে আমরা যতটুকু পাই, গ্রামের দিকে তো আরও বেশি লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।’

একই উপজেলার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির একটা চিত্র পাওয়া যায়। গত মঙ্গলবারের বর্ণনা দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই দিন সকাল ৯টায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার তিন ঘণ্টা পর দুপুর ১২টায় আসে। দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থেকে আবার বিকেল চারটায় আসে। আবার সন্ধ্যা ছয়টায় চলে গিয়ে আসে সন্ধ্যা ৭টা ২৬ মিনিটে। রাত ১০টায় চলে গিয়ে আসে রাত ১২টায়।

ঝাউগড়া এলাকার বাসিন্দা রেন্ট–এ–কার ব্যবসায়ী আতিক ইবনে আহমেদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এ অবস্থায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে মানুষের ঘুমানো কঠিন হয়ে পড়েছে। গরমে জানটা বের হয়ে যায়। বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। শ্বাসকষ্টের রোগীর নেবুলাইজার করা যায় না লোডশেডিংয়ের কারণে।

আড়াইহাজার উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতির কারণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁদের প্রতিদিন চাহিদা ২০০ মেগাওয়াট। সরবরাহে ঘাটতি থাকার কারণে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কখনো চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পেলে লোডশেডিং কম হয়।

নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ থেকে সোনারগাঁ, বন্দর ও রূপগঞ্জ তারাব পৌরসভা এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এসব এলাকায় রয়েছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।

সোনারগাঁ উপজেলার কায়েতপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী রায়হানা সুলতানা জানান, দুই ঘণ্টা পরপর প্রতিদিন গড়ে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় বাচ্চাদের লেখাপড়ায় সমস্যা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। তবে স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিল্পমালিকদের দাবি, প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে শিল্পকারখানার উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক মাশফিকুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন তাঁর আওতাধীন এলাকায় চাহিদা ৩৫০ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় গড়ে ২৫ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহর ও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। তাদের আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে।

তবে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনে–রাতে মিলিয়ে ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। একেকবার লোডশেডিংয়ে অন্তত এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেউলী চৌরাপাড়া এলাকার গৃহবধূ সেলিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, রাতে ও সকালে তিনবার বিদ্যুৎ ছিল না। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে আধা ঘণ্টার আগে আসে না।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে শিল্পকারখানার উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। উৎপাদন কমে গেলে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য রপ্তানিতে প্রভাব পড়ে। এমনিতেই ব্যবসায়ীরা চতুর্মুখী চাপে আছেন। তাই বিদ্যুতের লোডশেডিং কমিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।