হাত ঘুরলেই দাম দ্বিগুণ

বেশির ভাগ সবজি উৎপাদিত হয় জাজিরায়। ওই সব সবজি শরীয়তপুরের বিভিন্ন হাটবাজার ও ঢাকার বাজারে সরবরাহ করা হয়।

শরীয়তপুরের জাজিরার বড়কান্দি এলাকার কৃষক মতলব খান তিন বিঘা জমিতে ধনেপাতার আবাদ করেছেন। বুধবার তিনি প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে ৮০ কেজি ধনেপাতা বিক্রি করেছেন কৃষিপণে৵র পাইকারি বাজার মিরাসার চাষি বাজারে। অথচ একই ধনেপাতা শরীয়তপুর শহরের পালং বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে।

শুধু ধনেপাতাই না, শীতকালীন সব ধরনের শাকসবজি কৃষকের দামের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শরীয়তপুরের বিভিন্ন বাজারে।

কৃষক মতলব খান বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার তিন বিঘা জমিতে ১৪–১৫ মণ ধনেপাতা হবে। দুই মণ বিক্রি করেছি ১০০ টাকা কেজি দরে। পরে আরও কম দামে বিক্রি করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের উৎপাদন খরচই ওঠে না। আমরা ভালো দাম পাচ্ছি না; অথচ খুচরা বাজার থেকে ভোক্তাদের দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাবে কৃষক-ভোক্তা উভয়ই ঠকছি।’

শরীয়তপুরের জাজিরার মিরাসার চাষি বাজারে কৃষক শীতকালীন নানা ধরনের শাকসবজি বিক্রি করছেন। বুধবার তোলা
ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকায় সারা বছর শাকসবজির আবাদ করা হয়। এখানে বছরে ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ করেন কৃষকেরা। এসব জমিতে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন শাকসবজির ফলন হয়। এর মধ্যে শীতকালে আবাদ করা হয় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ শীতকালেই বেশি আবাদ ও উৎপাদন করা হয়। জেলায় শীতকালীন ১ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন শাকসবজি উৎপাদিত হয়।

শরীয়তপুর জেলায় অধিকাংশ সবজি উৎপাদিত হয় জাজিরা উপজেলায়। উৎপাদিত ওই সব সবজি শরীয়তপুরের বিভিন্ন হাটবাজার, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও ঢাকার বাজারে সরবরাহ করা হয়। জাজিরার মিরাসার চাষি বাজার জেলার শাকসবজি বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার। যেখানে কৃষকেরা পাইকারের কাছে সবজি বিক্রি করেন। পাইকারেরা ওই বাজারে আসা কৃষকদের কাছ থেকে সবজি ক্রয় করে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। দুই-তিন দফায় হাতবদল হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শাকসবজির দাম বাড়ছে।

গত বুধবার জাজিরার মিরাসার চাষি বাজার, শহরের পালং বাজার, আংগারিয়া বাজার ও নড়িয়ার ভোজেশ্বর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা শীতকালীন শাকসবজি এনে বিক্রি করছেন। তাঁরা প্রতি কেজি বেগুন ৩৫–৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। ওই বেগুন বাজারে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি করলা কৃষক বিক্রি করেছেন ৪০–৪২ টাকায়, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়। প্রতিটি লাউ কৃষক ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়।

ধনেপাতা কৃষক বিক্রি করেছেন ১০০–১২০ টাকা কেজিতে, খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। মুলা প্রতি কেজিতে কৃষক দাম পেয়েছেন ৩০ টাকা, খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। কৃষক প্রতি কেজি পেঁপে ১২–১৫ টাকায় বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫–৩০ টাকায়।

কৃষক প্রতি কেজি শিম বিক্রি করছেন ৭০–৮০ টাকায়; ওই শিম খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজিতে। বাঁধাকপি ও ফুলকপি কৃষক প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া লালশাক কৃষক ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও বাজার বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ টাকায়।

মিরাসার চাষি বাজার থেকে সবজি এনে শরীয়তপুর শহরের পালং বাজারে খুচরা বিক্রি করেন রাসেল সরদার। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করার পর আড়ত খরচ, পরিবহন খরচ ও শ্রমিক খরচ বিক্রেতাকে বহন করতে হয়। শাকসবজি পচনশীল পণ্য, বিক্রেতাদের ওই দিকটাও ভাবতে হয়। তাই কৃষকের দামের সঙ্গে খুচরা বিক্রেতাদের দামে কিছুটা তারতম্য রয়েছে।