সেতুটি সংস্কারের খবর নেই

২০২০ সালে বন্যায় সেতুটি ধসে যায়। এর পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সেতুটি দুই বছর ধরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে থাকায় জামালপুরের ইসলামপুরের ১৪টি গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। সম্প্রতি উপজেলার মোহাম্মদপুর উত্তরপাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

সেতুটির দৈর্ঘ্য ১০ মিটার। সেতুটি প্রায় দুই বছর ধরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে। দীর্ঘদিনেও সেতুটির সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় এর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ১৪টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। উৎপাদিত কৃষিপণ্য উপজেলা শহরে নিয়ে বিক্রি করতে ঘুরতে হচ্ছে অতিরিক্ত পথ।

এ চিত্র জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর উত্তরপাড়া গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখাখালের ওপর নির্মিত সেতুর।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ইসলামপুরের গোয়ালেরচর ইউনিয়নের সঙ্গে বকশীগঞ্জ শহরের যোগাযোগ সহজ করতে ২০১৩ সালে ১০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। গোয়ালেরচর থেকে এই সেতু পেরিয়ে ছয় কিলোমিটার গেলে বকশীগঞ্জ শহরে যাওয়া যায়।

সেতুটির পূর্ব পাশের মালমারা, কুমিরদহ, আগুনের চর, মহলগিরি, নাপিতের চর, শেখের চর, কাছিমারচর ও বুলকিপাড়া গ্রাম। সেতুটির পশ্চিম পাশে সুভুকুঁড়া, মোহাম্মদপুর উত্তরপাড়া, ফকিরপাড়া, পুড়ারচর, চর বাবনা ও মরাকান্দি গ্রাম। এর ফলে উভয় পাশের মানুষের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু। এ ছাড়া সেতুটি পার হয়ে গোয়ালেরচর উচ্চবিদ্যালয়, সভারচর উচ্চবিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। সেতুটি ধসে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১০ হাজার সাধারণ মানুষ। কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বিকল্প পথে ইসলামপুরের ফকিরপাড়া সেতু দিয়ে ঘুরে যাতায়াত করতে হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের পূর্ব পাশে সেতুটি ধসে পড়েছে। সেতুর পশ্চিম পাশের অংশটুকু উঁচু হয়ে আছে। পশ্চিম পাশ দিয়ে মাটি কেটে সড়ক তৈরি করা হয়েছে। সেখান দিয়ে ছোট যানবাহন ও লোকজন চলাচল করছে। সব ধরনের ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সেটাও পানিতে তলিয়ে যায়।

মোহাম্মদপুর উত্তরপাড়া গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী মো. তানভীর আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ওই সড়কের সেতুটি গ্রামবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিকল্প কোনো সড়ক নেই। সবাইকে এই সড়কই ব্যবহার করতে হয়। ২০২০ সালে বন্যায় সেতুটি ধসে যায়। এর পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেতুর পাশ দিয়ে মাটি কেটে চলাচল করা হয়। কিন্তু দুই বছরেও সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যানবাহনের চলাচল না থাকায় এসব গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

আগুনের চর গ্রামের কৃষক আজগর আলী (৫৫) বলেন, ‘বাবা, চরের মানুষ আমরা। চাষাবাদ করেই পেট চলে। আড়াই বছর থাকি ব্রিজ ভাঙি পড়ি আছে। তাও কেউ ঠিক করছে না। বানের সময় চলাই যায় না। এহন কোনো রহম যাওন যায়। এহানে এডা সেতুর খুব দরকার। সেতু হইলে আমাগরে কষ্ট কমবে। ধান, পাট ও শাকসবজি গাড়িত তুলি শহরের বাজারে নেওয়া যাবে।’

জামালপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়েদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় সেতুটি ধসে যায়। পরে বিকল্প হিসেবে একটি ডাইভারশন সড়ক করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সেতু নির্মাণ করা হবে।