বৃষ্টি না হওয়ায় কমলগঞ্জে মধু সংগ্রহ কমেছে, ক্ষতির আশঙ্কা

মৌ-বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত ২০ মে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মধ্যভাগে
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মধুচাষিরা বলছেন, মধু সংগ্রহের ভরা মৌসুমে মৌ বাক্স থেকে মধু কম পাওয়া যাচ্ছে। এবার কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় গাছে পর্যাপ্ত ফুল আসেনি। ফলে প্রতিটি মৌ বাক্স থেকে এই মৌসুমে অন্য বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক মধু পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া মৌমাছিরা কলোনি (মৌ বাক্স) ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মৌমাছির প্রজনন। 

কমলগঞ্জ উপজেলা মধু চাষ উদ্যোক্তা উন্নয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সারা উপজেলায় মধুচাষির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। একেকজন মধুচাষির চারটি থেকে দুই শতাধিক মৌ বাক্স রয়েছে। 

উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কোনাগাঁওয়ের মধুচাষি মঙ্গল মিয়া গত মঙ্গলবার বলেন, অন্য বছর থেকে এবার হিসাবে বাক্সে মধু কম। গত বছর এ সময় (বৈশাখ-জ্যেষ্ঠ) একেকটি বাক্সে ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত মধু মিলেছে। এবার চার থেকে পাঁচ কেজি মিলছে। মঙ্গল মিয়া আরও বলেন, উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে তাঁর দেড় শতাধিক বাক্স আছে। বৈশাখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের মধ্যে একটি বাক্স থেকে দুই-তিনবার মধু সংগ্রহ করেন তিনি। কোনো বাক্সে মৌমাছির পরিমাণ বেশি হলে এই সময়ে চারবারও মধু সংগ্রহ করতে পারেন। প্রতিবছর বিনিয়োগ করতে হয় না বলে তাঁদের নগদ ক্ষতি হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু মধু কম পাওয়ায় সম্ভাব্য আয় এবার হবে না। 

উপজেলা মধু চাষ উদ্যোক্তা উন্নয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মধু চাষ হয়ে আসছে। বাড়ির ভেতর, আঙিনা, ফসলের খেতসহ বিভিন্ন স্থানে মৌ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে এই মধু আহরণ করা হচ্ছে। একেকজন চাষির দুটি-চারটি থেকে দুই শতাধিক কলোনি আছে। রানি মৌমাছিসহ একটি বাক্স স্থাপন করতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা লাগে। এই একবারই বিনিয়োগ করতে হয়। এরপর প্রতিবছর এই বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন চাষিরা। একটি বাক্স থেকে বছরে অন্তত চারবার মধু সংগ্রহ করা যায়। প্রতিবার ৪ থেকে ১১ কেজি পর্যন্ত মধু মেলে। একটি বাক্সে বছরে ১৫ থেকে ২০ কেজি মধু পাওয়া যায়। এক কেজি মধু কমপক্ষে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। 

মধুচাষিরা বলেন, উপজেলার আদমপুর ও ইসলামপুর ইউনিয়নেই মধুচাষি বেশি। আম, জাম, পেঁপে, লেবু, লিচু, ঘাস, বুনো গাছপালা থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে থাকে। বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যেই বেশি মধু সংগ্রহ হয়। কিন্তু এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় চাষিরা মধু কম পাচ্ছেন। বুনো গাছসহ বিভিন্ন ফলের গাছে পর্যাপ্ত ফুল আসেনি। প্রচণ্ড গরম ও খাদ্যসংকটে অনেক মৌমাছি বাক্স ছেড়ে চলে যাচ্ছে। প্রজনন ব্যাহত হওয়ায় রানি মৌমাছি মিলছে না। একটি কলোনিতে বছরে চার থেকে পাঁচটি রানি মৌমাছি জন্মে থাকে। একটি রানি মৌমাছি দিয়ে নতুন কলোনি গড়ে তোলা হয়। রানি মৌমাছিকে কেন্দ্র করেই কলোনিতে অন্য মৌমাছিরা ভিড় করে। রানি না হওয়ায় নতুন কলোনি বাড়ছে না। 

নছরতপুর গ্রামের রিনা বেগম গত মঙ্গলবার বলেন, ‘দুই-তিন দিন আগে একটা বাক্স খুলছি। চার কেজির মতো মধু পাইছি। এবার খরায় গাছে ফুল কম আইছে (আসছে)। একটা বাক্স থেকে মৌমাছি চলে গেছে। এবার আর বেচা যাবে না।’ 

ইসলামপুর ইউনিয়নের রাজকান্দির আজির উদ্দিন গতকাল বুধবার বলেন, তাঁর ১০০টি মৌ বাক্স আছে। এবার মধু হয়েছে ৫০টিতে। ৫০টি বাক্সেই মৌমাছি নেই। মৌমাছি খাবার না পাওয়ায় উড়ে চলে যাচ্ছে। 

কমলগঞ্জ উপজেলা মধু চাষ উদ্যোক্তা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় গাছে ফুলের পরিমাণ কম। যে ফুল এসেছে, তাতেও রস কম। যে কারণে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করতে পারে না। এ ছাড়া গরমে অনেক মৌমাছি কলোনি ছেড়ে যাচ্ছে। মৌমাছির প্রজনন হচ্ছে না। মধু সংগ্রহের মূল মৌসুম ফুরিয়ে যাচ্ছে। এবার মধু উৎপাদন কম হবে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক কৃষিবিদ সামছুদ্দিন আহমেদ গতকাল বলেন, খরার কারণে আউশ ধানই চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। খরার কারণে ফুল নেই, মধু কোথায় পাবে মৌমাছি। এ ছাড়া যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে মৌমাছির টিকে থাকাই মুশকিল।