ঈদের ছুটির আগেই গাজীপুরের চন্দ্রায় যানবাহনের চাপ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় থেমে থেমে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। আজ রোববার সকালের চিত্র
ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র ১০ দিন। ছুটি শুরু হয়নি এখনো। তারপরও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে। আগের মতো এবারও যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের থাকছে বিশেষ ব্যবস্থা।

চন্দ্রা দিয়েই উত্তরবঙ্গের প্রায় ২৩টি জেলার মানুষ চলাচল করে। সাধারণত ঈদের পাঁচ-ছয় দিন আগে মানুষ ছুটতে শুরু করে। তবে এবার আজ রোববার থেকেই মহাসড়কে চাপ বেড়েছে যাত্রী ও যানবাহনের।

এদিকে রোববার দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকা পরিদর্শনে আসেন হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মাহফুজুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এবারের ঈদে যানজট নিরসনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে যানজটপ্রবণ জায়গাগুলোকে চিহ্নিত করেছি। সেসব জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া আমরা ড্রোনের মাধ্যমে পুরো চন্দ্রা এলাকা নজরদারি করব। একই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় কন্ট্রোল-সাব কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সগুলো এবং রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এবার বিশেষ একটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেটা হলো মহাসড়কের পাশের গ্যারেজগুলোর একটি তালিকা করা হয়েছে। যেন কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মেরামত করতে পারে।’

রোববার মহাসড়কের চন্দ্রা গিয়ে দেখা যায়, নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক ও জয়দেবপুর–টাঙ্গাইল সড়ক পথে ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে। এই পথ ধরে সবাই চন্দ্রা থেকে উঠছেন দূরপাল্লার বাসে। অতিরিক্ত এসব যাত্রীর আনাগোনায় বেড়েছে পরিবহনের সংখ্যাও। যানজট কমাতে চন্দ্রা উড়ালসড়কের পশ্চিম পাশে সড়কের মাঝে অতিরিক্ত বিভাজক (ডিভাইডার) দিচ্ছে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে ৩২টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, যানজট নিরসনে চন্দ্রা এলাকায় একটি উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। উড়ালসড়কটি দিয়ে এখন টাঙ্গাইলের দিক থেকে গাজীপুরগামী এবং গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলগামী যানবাহনগুলো চলাচল করছে। তবে গাবতলী, সাভার ও নবীনগর হয়ে যেসব যানবাহন চলাচল করে, সেগুলোকে নিচ দিয়েই চলাচল করতে হয়। কিন্তু উড়ালসড়কটির নিচে দক্ষিণ–পশ্চিম পাশের জায়গা অনেক সংকুচিত। যার কারণে নিচ দিয়ে চলাচল করা যানবাহনগুলোকে সেখানে গিয়ে আটকে থাকতে হয়। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। রোববার সকালেও সেখানে যানজট দেখা গেছে। তবে সওজ ওই স্থানে নতুন করে একটি সড়ক বিভাজক তৈরি করছে।

চন্দ্রা এলাকায় পরিবহন ব্যবসায়ী মো. ইউছুব আলী বলেন, উড়ালসড়কের নিচে রাস্তা সংকুচিত হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে সড়কটি আরও প্রশস্ত করা প্রয়োজন ছিল। তবে এখন সড়ক বিভাজক তৈরি করা হচ্ছে, এতে কতটা লাভ হবে, সেটি নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

যাত্রী ও এলাকাবাসী জানান, ঈদের কিছুদিন বাকি থাকলেও অনেকেই তাঁদের পরিবারকে এখনই গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ঈদের আগে পর্যাপ্ত যানবাহন না পাওয়া যাওয়ায় অনেক কষ্ট করে যেতে হয়। অনেক সময় বাসে সিট না পেয়ে ট্রাকে বা বাসের ছাদেও উঠতে হয়। তাই যাঁদের স্ত্রী–সন্তানদের কোনো কাজ নেই, তাঁরা এখন গ্রামের বাড়িতে রওনা হয়েছেন। এ কারণে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে।

সন্তানদের বিদ্যালয় ছুটি হওয়ায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন আঞ্জুয়ারা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী গাজীপুরের একটি কারখানায় কাজ করেন। তার ছুটি হবে ঈদের দুই দিন আগে। সন্তানের স্কুল ছুটি হওয়ায় আগেই গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি যাচ্ছি। ঈদের আগে যানজট হয়, এ জন্য আগেই যাচ্ছি।’

নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন এখন মহাসড়কে যাত্রী বাড়বে। আমরা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি। গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছি, সেসব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।’