টাঙ্গাইল
৩৯৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য
প্রধান শিক্ষকের পদগুলো ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান রয়েছে।
■ শহরের স্কুলগুলোতে অবসরের কারণে পদ শূন্য হলে পূরণ হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় অবসরে যাওয়ার পর শূন্যই থেকে যাচ্ছে।
■ কোনো কোনো বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য।
■ সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়াও বন্ধ আছে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলে পূর্ব রামাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাঁচ বছর হয় এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। একজন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। এ কারণে তাঁকে প্রশাসনিক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। বাকি দুজন সহকারী শিক্ষককে সামলাতে হয় পুরো বিষয়। এতে ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়া।
শুধু পূর্ব রামাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার ৩৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
পূর্ব রামাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে চলতি দায়িত্বে আছেন ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান। অপর সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আসাদুজ্জামান মিয়াকে প্রশাসনিক দায়িত্বপালন করতে হয় আবার ক্লাসও নিতে হয়। প্রশাসনিক কাজে বা বিভিন্ন সভায় যোগদান করতে তাঁকে প্রতি মাসেই যেতে হয় উপজেলা সদরে। তখন তিনি ক্লাস নিতে পারেন না। এর ফলে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হয়।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইলে ১৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯০টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সখীপুরে ১৪৭টির মধ্যে ১৫টিতে, গোপালপুরে ১৬১টির মধ্যে ৪৯টিতে, বাসাইলে ৭৯টির মধ্যে ১৩টিতে, সদরে ১৬৩টির মধ্যে ৩১টিতে, দেলদুয়ারে ১০০টির মধ্যে ২৮টিতে, মির্জাপুরে ১৭০টির মধ্যে ২৩টিতে, কালীহাতিতে ১৭০টির মধ্যে ২৯টিতে, মধুপুরে ১১০টির মধ্যে ২০টিতে, নাগরপুরে ১৫৬টির মধ্যে ৪৬টিতে, ভূঞাপুরে ১১০টির মধ্যে ২৮টিতে এবং ধনবাড়ীতে ৮৫টির মধ্যে ২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য।
সদর উপজেলার বাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছফেদা খানম এক মাস আগে অবসরে গেছেন। তারপর সেখানে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী শিক্ষক আছমা পারভীনকে। এভাবেই কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর শূন্য হয়ে পড়ছে পদগুলো। সেখানে সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহর এলাকায় বা শহরতলীর স্কুলগুলোতে অবসরের কারণে পদ শূন্য হলে অন্য এলাকা থেকে বদলি হয়ে পদ পূরণ হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে অবসরে যাওয়ার পর পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে। তাই প্রতিবছরই বাড়ছে প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য স্কুলের সংখ্যা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের পদগুলো ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হচ্ছে না। আবার সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। তাই প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করা যাচ্ছে না।
টাঙ্গাইলের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করছে। পদোন্নতি হলে শূন্য পদগুলো পূরণ করা যাবে।
টাঙ্গাইলের সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ শামসুল হুদা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিশুদের শিক্ষার ভিত তৈরি হয়। তাই সেখানে পাঠদান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পদোন্নতি ও নিয়োগসংক্রান্ত সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।