চরজুড়ে বাদামের বাম্পার ফলন

বাদামখেতের পরিচর্যা করছেন দুই কৃষকছবি: প্রথম আলো

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি চরজুড়ে চলতি মৌসুমে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভালো থাকায় উৎপাদিত বাদাম বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। এতে তাঁদের মুখে ফুটছে হাসি। তাঁদের দেখাদেখি বাদাম চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন আরও অনেকেই।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়েছে। বারি চিনাবাদাম ৪, বারি চিনাবাদাম ৫, বারি চিনাবাদাম ৬, বারি চিনাবাদাম ৮-সহ আরও কয়েকটি জাত মিলিয়ে মোট ৯০ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়। তিন শতাধিক কৃষক বাদামের আবাদ করেন। গত নভেম্বরে বাদাম আবাদের মৌসুম শুরু হয়। এর মধ্যে চর চারআনি, ষাটনল, চরকাশিম, নয়াচর, বোরোচর, বাহেরচর, লক্ষ্মীপুর, চরওয়েস্টার ও চরলক্ষ্মীপুর এলাকায় বেলে মাটিতে বাদামের আবাদ হয়েছে ৭০ হেক্টর জমিতে। এবার বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২২৫ মেট্রিক টন।

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার চরলক্ষ্মীপুর, লক্ষ্মীপুর, ষাটনল, চরকাশিম, নয়াচর, বোরোচরসহ আরও কয়েকটি চর এলাকায় দেখা যায়, সেখানে রাশি রাশি বাদামখেত। বিস্তীর্ণ বালুভূমিতে দোল খাচ্ছে হাজারো সবুজ বাদামগাছ। বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা বাদামের ফলন দৃশ্যমান না হলেও কিছু বাদাম বালু ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে। কৃষকদের কেউ কেউ বাদামখেতের পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ খেত থেকে বাদাম তুলে বিক্রির জন্য বাজারে নিচ্ছেন। গোটা চরাঞ্চলই ভরে গেছে বাদামের ঘ্রাণে।

চরকাশিম এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম গাজী বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এ মৌসুমে ১০ শতক জমিতে বাদামের আবাদ করেন। এতে খরচ হয় ৮ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত খেত থেকে ৯০ কেজি বাদাম তুলে বিক্রি করেছেন সাড়ে ১০ হাজার টাকা। খেত থেকে আরও ২০ থেকে ৩০ কেজি বাদাম তুলতে পারবেন। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা বাদামের দর ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। খেতের সব বাদাম তুলে বিক্রি করে পাবেন ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা।

একাধিক বাদামচাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব কম থাকায় এবার বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। রাসায়নিক সার ছিটাতে হয়েছে খুব কম। শ্রমিকের খরচও তেমন লাগেনি। কম খরচে বাদাম উৎপাদন করে বাজারে সেগুলো বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

ষাটনল এলাকার কৃষক মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, উৎপাদিত বাদাম বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করছেন। খরচ মিটিয়ে লাভও হচ্ছে ভালো। অনেক কৃষক বাদাম চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।

এবার উপজেলায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, বাদাম চাষে খরচ কম। ক্ষতির ঝুঁকিও নেই তেমন। এসব কারণে কৃষকেরা বাদাম চাষে বেশি উৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষকদের বাদাম চাষে নানাভাবে উৎসাহিত করছেন।