চনপাড়ার আলোচিত আ.লীগ নেতা বজলুরের বিরুদ্ধে তিন মামলা, রিমান্ড শুনানি রোববার

বজলুর রহমান
ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, জাল টাকা ও বিদেশি মুদ্রা রাখার অভিযোগে তিনটি মামলা করেছে র‍্যাব। শুক্রবার দিবাগত রাতে র‍্যাব-১-এর নায়েব সুবেদার মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলাগুলো করেন।

জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ নিয়ে বজলুরের বিরুদ্ধে মোট ২৬টি মামলা হলো। শুক্রবার হওয়া তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রতিটি মামলায় ৭ দিন করে মোট ২১ দিনের রিমান্ড আবেদন করে শনিবার তাঁকে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলায় ৭ দিন করে ১৪ দিন এবং জাল টাকা ও বিদেশি মুদ্রা রাখার অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রোববার রিমান্ডের শুনানি হবে।

এ বিষয়ে র‍্যাব-১-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমেদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার বিকেলে পূর্ব গ্রাম থেকে অস্ত্র, মাদক, জাল টাকা, বিদেশি মুদ্রাসহ বজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৫টি গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, ২৫ হাজার ভারতীয় রুপি ও ৭৫ হাজার টাকার জাল নোট, মাদক বিক্রির নগদ সাড়ে ২১ হাজার টাকা ও ১টি মুঠোফোন জব্দ করা হয়।

র‍্যাবের ওই বিজ্ঞপ্তিতে সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (চনপাড়া বস্তি) এলাকার চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক বজলুর রহমান ওরফে বজলু (৫২)। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে তাঁর বেশ কয়েকজন সহযোগী কাজ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অপরাধে এখন পর্যন্ত ২৩টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে। তিনি চনপাড়া বস্তি এলাকাসহ আশপাশের এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা তুলতেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

র‍্যাবের ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রটি প্রকৃতপক্ষে চনপাড়া বস্তি নামে অধিক পরিচিত। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষ এই বস্তিতে বসবাস করে। ঘনবসতিপূর্ণ এই চনপাড়া বস্তি ৯টি এলাকায় বিভক্ত। এসব এলাকার শীর্ষ ৫-৬ জন মাদক কারবারির প্রধান সমন্বয়ক ও গডফাদার ছিলেন বজলুর রহমান ওরফে বজলু। বস্তি এলাকার মাদকের প্রায় ২০০টি স্পট থেকে কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বজলু এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে।

র‍্যাব জানায়, বজলুর রহমান স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে ‘বজলু ভাই’ নামে পরিচিত। বিভিন্ন সোর্স তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় এলাকার ছেলেদের টাকা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম, যেমন হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এও পতিতালয় পরিচালনা করাতেন। কেউ চাঁদা না দিলে তাঁর ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হতো। এসব নিয়ে গত এক-দেড় বছরে নিহত হয়েছেন ছয়জন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাধী গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা (র‌্যাব) চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় বজলুর রহমান ওরফে বজলুর নির্দেশে অপরাধীরা র‍্যাবের ওপর হামলা চালান।