রাজবাড়ীতে চাঁদা না পেয়ে মধ্যরাতে গ্রামে গিয়ে হামলা, গ্রাম পুলিশ গুলিবিদ্ধ

গুলিবিদ্ধ গ্রাম পুলিশ মনিরুল ইসলামকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছেছবি: সংগৃহীত

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় মুঠোফোনে চাঁদা চেয়ে না পেয়ে মধ্যরাতে গ্রামে গিয়ে হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার কলিমহর ইউনিয়নের বসাকুষ্টিয়া গ্রামের চারটি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।

গ্রামবাসীর ফোন পেয়ে গ্রাম পুলিশ সদস্য মনিরুল ইসলাম (৪০) বাড়ি থেকে বের হলে সন্ত্রাসীরা তাঁকে পিটিয়ে বাঁ পা ও হাতে গুলি করে ফেলে যায়। খবর পেয়ে পাংশা মডেল থানা-পুলিশ গুলিবিদ্ধ মনিরুলকে উদ্ধার করে প্রথমে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাঁকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়।

হামলাকারীরা নিষিদ্ধ চরমপন্থী দলের সদস্য ও ভারতে পলাতক বিকাশ গ্রুপের সদস্য বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর বসাকুষ্টিয়া গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে ভারতে পলাতক চরমপন্থী নেতা বিকাশ ফোন করে বসাকুষ্টিয়া গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী মোসলেম শেখের ছেলে আবদুর রাজ্জাক শেখ ও কৃষক মুক্তার প্রামাণিকের ছেলে রেজাউল প্রামাণিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় গতকাল দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে সন্ত্রাসীরা প্রথমে রাজ্জাকের বাড়িতে হামলা করে। কিন্তু দরজা না খোলায় দুটি ফাঁকা গুলি করে দরজা ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে তাঁর নিকটাত্মীয় মোহাম্মদ শেখের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে একটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এরপর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য কালাম শেখের বাড়িতে হানা দেয়। তাঁর বাড়িতেও ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পাশের রেজাউল প্রামাণিকের বাড়িতে হানা চালায়। বাড়ির প্রধান ফটক ক্ষতিগ্রস্ত করে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে দুটি গুলি ছুড়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা।

মনিরুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

হামলার খবর পেয়ে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মনিরুল ইসলাম বাড়ি থেকে বের হলে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ব্যাপক মারধর করে। পরে তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালি ও বাঁ হাতের কনুই বরাবর দুটি গুলি করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পুলিশ গুলিবিদ্ধ মনিরুলকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

গ্রাম পুলিশ সদস্য দিলবর আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী গ্রামে ঢুকে প্রথমে রাজ্জাকের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে মোহাম্মদ শেখ, সাবেক ইউপি সদস্য কালাম শেখ ও রেজাউলের বাড়িতে হামলা করে। সন্ত্রাসীদের গুলির শব্দে ভয়ে কেউ বাড়ি থেকে বের হননি। সহকর্মী মনিরুল এগিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে বাড়িতে ধরে বেদম মারধর করে এবং দুটি গুলি করে।

পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ভারতে পলাতক চরমপন্থী নেতা বিকাশ কয়েক দিন আগে ফোনে রাজ্জাক ও রেজাউল প্রামাণিকের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই টাকা না দেওয়ায় গতকাল মধ্যরাতে তাঁর বাহিনী হামলা করে। গুলিবিদ্ধ গ্রাম পুলিশ মনিরুল বর্তমানে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বজনেরা চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এখনো থানায় মামলা হয়নি। বিকাশ তালিকাভুক্ত চরমপন্থী সন্ত্রাসী। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।