ছাইয়ের মধ্যে শেষ সম্বল খুঁজছেন মনোয়ারা-তাহেরা

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পোড়া আসবাব।আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে
ছবি: প্রথম আলো

নিজের পুড়ে যাওয়া ঘরের ছাই সরিয়ে কিছু খুঁজছিলেন বিবি তাহেরা। সকালে লাগা আগুনে সবই পুড়ে গেছে তাঁর। জমানো ৫০ হাজার টাকা, দুটি সেলাই মেশিন আর আসবাব—সবই এখন ছাই। তবু জমানো টাকা থেকে যদি কিছু উদ্ধার করা যায়, সেই আশায় ছাইয়ের গাদা ঘাঁটছিলেন তিনি।

আজ বুধবার সকাল ছয়টায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে আগুনে বিবি তাহেরারটিসহ অর্ধশতাধিক ঘর, দুটি ঝুট কাপড়ের গুদাম ও ছয়টি দোকান পুড়ে গেছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও সর্বস্ব হারিয়েছে অন্তত ৪০টি পরিবার। ফায়ার সার্ভিসের চার স্টেশনের ছয়টি ইউনিট সকাল ৯টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয়।

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ এলাকার আমিন কলোনিতে আগুন লেগে পুড়ে যায় বেশ কিছু বসতঘর। পুড়ে যাওয়া ঘরে নিজেদের জিনিসপত্র খুঁজছে লোকজন। আজ বেলা ১২ টায়
ছবি- সৌরভ দাশ

আজ বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে কথা হয় বিবি তাহেরার সঙ্গে। প্রথম আলোকে তাহেরা বলেন, মানুষের বাসায় কাজ করেন তিনি। কিছু টাকা জমিয়েছিলেন কিস্তির জন্য। টাকা-আসবাব—সবই পুড়ে গেছে। সকালে ঘুম ভাঙে মানুষের চিৎকার শুনে। কিছুই বাঁচাতে পারেননি। সবই কেড়ে নিয়েছে আগুন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আর পাঁচ মিনিট দেরি হলে আমার নাতিটাও পুড়ে যেত আগুনে।’

সরেজমিন দেখা যায়, পুরো এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পোড়া আসবাব। গতকাল রাতে সব সাজানো-গোছানো থাকলেও আজ প্রতিটি ঘর ছাইয়ের স্তূপে পরিণত হয়েছে।
বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আগ্রাবাদ, বায়েজিদ, কালুরঘাট ও চন্দনপুরা স্টেশনের আটটি ইউনিট সকাল ৯টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয়। ছয়টি দোকান, দুটি গুদাম ও বেশ কিছু ঘরবাড়ি পুড়ে যায়।

ছাইয়ের স্তূপে বসে জমানো টাকাপয়সা খুঁজছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মনোয়ারা বেগম। কান্নায় ভেঙে পড়া মনোয়ারা বারবার বলছিলেন, কেউ নেই তাঁর, কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। কাগজের টাকা পুড়ে গেলেও পয়সাগুলো অক্ষত। সে সবই কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। মনোয়ারা জানেন না, সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে তাঁদের।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, কলোনির পাশে একটি রান্নাঘর ও জুটের গুদাম ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, রান্নাঘর অথবা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে বিস্তারিত তদন্তের পর বলা যাবে।