চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা না করেই বগুড়ার ফতেহ আলী সেতুর পুনর্নির্মাণকাজ শুরু

গত সোমবার করতোয়া নদীর ওপর সেতু পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এটি নির্মাণে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বগুড়া শহরের শাহ ফতেহ আলী সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। গত সোমবার বগুড়া শহরের চেলোপাড়া এলাকায়
ছবি: সোয়েল রানা

পূর্ব বগুড়ার চার উপজেলার মানুষের কাছে জেলা শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত করতোয়া নদীর ওপর ফতেহ আলী সেতুর পুনর্নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু নদী পারাপারের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না করায় সেতু এলাকা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিন দুই পারের লাখো মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। 

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বগুড়া কার্যালয় সূত্র জানায়, ছয় বছরের বেশি সময় ধরে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকা ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এ সেতু ভেঙে নতুন নকশায় সেতু নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে সওজ। গত সোমবার সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্ব বগুড়ার গাবতলী, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার লোকজন ছাড়াও বগুড়া পৌরসভার চেলোপাড়া, নারুলী, কইপাড়া, নাটাইপাড়া, সাবগ্রাম, আকাশতারাসহ বিভিন্ন এলাকার লাখ লাখ মানুষ ফতেহ আলী সেতু পারাপার হয়ে জেলা শহরে যাতায়াত করেন। গাবতলী ও সদরের বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা খেতের সবজি নিয়ে প্রতিদিন সকালে নদী পারাপার হয়ে রাজাবাজারে আড়তে তা বিক্রি করেন। 

আবার নদীর পূর্ব পারের বিভিন্ন এলাকার লোকজন বাজার, কেনাকাটা ছাড়াও দাপ্তরিক কাজে নদীর পশ্চিম পারে যাতায়াত করেন। নদীর পূর্ব পারের চাষিবাজারের আড়তে প্রতিদিন ভোরে মাছের পাইকারি বাজার বসে। কোটি টাকার মাছ বেচাবিক্রি হয় এই বাজারে। পশ্চিম পারের ফতেহ আলী বাজার, বকশীবাজার, খান্দার বাজার, কলোনি বাজার, নামাজগড় বাজার, কালীতলা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা চাষিবাজার থেকে পাইকারি মাছ কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন। নদী পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা না করেই ফতেহ আলী সেতু ভেঙে ফেলায় দুই পারের মানুষজনকে দীর্ঘ পথ ঘুরে শহরে যাতায়াত করতে হয়। এতে বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। 

সওজ বগুড়া কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারের কাছে করতোয়া নদী পারাপারে ৬১ মিটার দীর্ঘ ও ৬ ফুট প্রস্থের সেতু নির্মিত হয়। বগুড়ার ফতেহ আলী (রহ) মাজারের সঙ্গে মিল রেখে সেতুর নামকরণ করা হয় ফতেহ আলী নামে। পুরোনো এই সেতুর আয়ুষ্কাল অনেক আগেই শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালে ফতেহ আলী সেতুকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে পাটাতন ও গার্ডারের কিছু অংশ সংস্কার করা হয়। পরে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করে সেতুর দুই পাশে সিমেন্টের খুঁটি পুঁতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সেতুর ওপর ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

সওজের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, করতোয়া নদীর ওপর অত্যাধুনিকভাবে ফতেহ আলী সেতু পুনর্নির্মাণে ১৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৬৯ মিটার এবং প্রস্থ ১২ দশমিক ৩ মিটার। এই সেতুর দুই পাশে সেতু সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণে আরও ব্যয় হচ্ছে ২০ কোটি টাকা। 

 সওজের একটি সূত্র জানায়, সেতু নির্মাণের কাজ পেয়েছে মেসার্স জামিল ইকবাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৫ মে কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরোনো সেতু ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

সোমবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফতেহ আলী সেতু পুনর্নির্মাণের ভিত্তিস্থাপনের পরপরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা পুরোনো সেতু ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছেন। তবে নদী পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত না করেই ফতেহ আলী সেতু ভেঙে ফেলায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই পারের মানুষ।

চাষিবাজারের ফেলুরাম মৎস্য আড়তের রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘নদী পারাপারে বিকল্প সেতু নির্মাণ না করে মূল সেতু ভেঙে ফেলায় দুই পারের লাখো মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।’

সওজ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার থেকে ফতেহ আলী সেতু পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে জায়গা ও অর্থসংকটে বেইলি সেতুর মতো বিকল্প সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। তবে শুধু হেঁটে নদীর ওপারের লোকজন যাতে দরকারি কাজে শহরে যাতায়াত করতে পারেন, এ জন্য নদীতে আড়াআড়িভাবে মাটি ভরাট কিংবা চলাচলের বিকল্প পথ করে দেওয়া হবে।