সড়কে বসে ‘দ্বিতীয় স্ত্রীর’ প্রতিবাদের পর ইউএনওকে ওএসডি

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

কর্মস্থলে যোগদানের ২৫ দিনের মাথায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে বদলি করা হয়।

দিনাজপুরের একটি কলেজের শিক্ষিকা আরিফুল ইসলামকে স্বামী দাবি করে ‘স্ত্রীর মর্যাদা’ চেয়ে গত বুধবার বিকেলে আক্কেলপুরের প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন। এ ঘটনার পর গতকাল আরিফুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। নতুন ইউএনও হিসেবে বদলি করে আনা হয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মনজুরুল আলমকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে এই রদবদল করা হয়।

আরিফুল ইসলাম নওগাঁর ধামুইরহাটের ইউএনও ছিলেন। গত আগস্টের শেষ দিকে তাঁকে আক্কেলপুরে ইউএনও হিসেবে বদলি করা হয়। ৪ সেপ্টেম্বর তিনি আক্কেলপুরের ইউএনওর দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীর গাজী গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আক্কেলপুরের ইউএনও আরিফুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। এখানে মনজুরুল আলমকে ইউএনও হিসেবে বদলি করে আনা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ও উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে দিনাজপুর শহরের বাসিন্দা ও সেখানকার একটি কলেজের শিক্ষিকা দেড় বছর বয়সী এক পুত্রসন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা পরিষদে আসেন। তিনি আরিফুল ইসলামের কক্ষে যেতে চাইলে ইউএনওর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে ঢুকতে বাধা দেন। তখন ওই নারী চিৎকার করতে করতে উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে এসে সন্তান কোলে নিয়ে বসে পড়েন। এ সময় উৎসুক জনতা তাঁকে ঘিরে রাখেন। সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

সড়কে বসে ওই নারী জনতার উদ্দেশে বলেন, আরিফুল ইসলাম তাঁর দ্বিতীয় স্বামী। কোলে থাকা শিশুটি আরিফুলের সন্তান। পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে আরিফুল তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ কারণে তিনি এখানে এসেছেন। ইউএনওর নির্দেশে আনসার সদস্যরা মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেওয়ায় ‘স্ত্রীর মর্যাদা’ ফিরে পেতে তিনি সড়কে বসেছেন।

এ ঘটনার পর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম আকন্দ এসে ওই শিক্ষিকাকে তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা দেনদরবারের পর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ওই নারী উপজেলা সহকারী কমিশনার ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে বাইরে আসেন।

ওই নারী বলেন, আরিফুল ইসলাম আগে দিনাজপুর সদর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একটি জমি খারিজ করতে গিয়ে সেখানে আরিফুলের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়। পরে তাঁদের প্রেম হয়। এরপর ২০২১ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্টহাউসে ২০ লাখ ১০১ টাকা কাবিনে তাঁদের বিয়ে হয়। তিনি প্রথম স্ত্রী থাকার কথা আগে জানতেন না। বিয়ের কাবিননামায় আরিফুল প্রথম স্ত্রী থাকার কথা উল্লেখ করেননি।

ওই নারী আরও অভিযোগ করেন, ‘আরিফুল প্রথম থেকেই আমাদের বিয়ের কথা কৌশলে গোপন করছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর গর্ভপাত করাতে বাধ্য করেন। পরে আমাদের সংসারে একটি ছেলেসন্তানের জন্ম নেয়। সাপ্তাহিক ছুটিতে আরিফুল দিনাজপুরের বাসায় গিয়ে থাকতেন। হঠাৎ পাঁচ থেকে দিন ধরে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে আমি এখানে আসি।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম আকন্দ বলেন, ‘ঘটনার পর ওই শিক্ষিকাকে আমার কার্যালয়ের ডেকে এনে বিস্তারিত শুনেছি। ইউএনও আমাদের কাছে তালাকনামার ফটোকপি দেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনও আরিফুল ইসলাম তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। যেহেতু তালাক হয়েছে, আবার ইউএনওর প্রথম স্ত্রীও আছেন, এ কারণে কোনো সমাধান করা যায়নি।’

মো. আরিফুল ইসলাম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁকে ব্ল্যাকমেল করে ট্র্যাপে ফেলে বিয়ে করানো হয়েছিল। তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। এটি জানার পর পরিকল্পিতভাবে তাঁর সম্মানহানি করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালে ইউএনও আরিফুল দিনাজপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কর্মরত ছিলেন। সে সময় তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই ঘটনার পর আরিফুলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল সেখানকার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এরপর সেখান থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়।