খবর রটেছিল ‘চাঁদাবাজির’, সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দাবি করলেন মবের শিকার হয়েছেন

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী। মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ের পাশে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘চাঁদাবাজি’ করতে গিয়ে তিনজন সমন্বয়কসহ মোট চারজন আটক হয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাবেক সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন, চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ‘আওয়ামীপন্থীদের মব’-এর শিকার হয়েছেন তাঁরা কয়েকজন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি ও মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ের পাশে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সেখানে গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলার মুখ্য সংগঠক সোহাগ সরদার, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ বারী এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আজ দুপুরে নগরের বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ওই চারজনকে উদ্ধার করে নগরের চন্দ্রিমা থানায় নিয়ে যান। ওই চারজন ‘চাঁদাবাজি’ করতে গিয়ে আটক হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে। পরে চন্দ্রিমা থানা থেকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাতে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান ও ঘটনার বর্ণনা করেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাবেক সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়–প্রশ্রয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। বেশ কয়েক দিন ধরে নগরের পদ্মা আবাসিকে অবস্থিত বারিন্দ মেডিকেল কলেজ থেকে আমাদের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ আসতে থাকে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাবার (যিনি শাহরিয়ার আলমের অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন) আশ্রয়ে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কর্মরত রয়েছেন।’

গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, ‘চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে আমরা সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে যাই। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সচিব (ভারপ্রাপ্ত) তাজুল ইসলাম রনির সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল, চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনায় বসি। আলোচনার এক পর্যায়ে সেখানে কর্মরত বেশ কয়েকজন অফিস স্টাফ, যাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ঢুকে পড়েন এবং আমাদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু করেন। ওই কক্ষ এবং প্রতিষ্ঠানটির বাইরে “মব” তৈরি করে আমাদের আটকে ফেলা হয়। এই পরিস্থিতিতে আমরা পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাইদের সহায়তায় সেখান থেকে বের হই।’

এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, ‘এ ঘটনাকে ইস্যু করে ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের চাঁদাবাজ বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়। কোনো ধরনের অভিযোগ কিংবা তথ্য–প্রমাণ ছাড়া যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমার মর্যাদাহানির উদ্দেশ্যে ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়েছেন, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মতিয়ার রহমান বলেন, ‘সমন্বয়কেরা কয়েকজন প্রতিষ্ঠানটির এমডির ছেলের (শাহরিয়ার আলম) খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন। পরে তাঁদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের লোকজনের বাগ্‌বিতণ্ডা হয় এবং তাঁদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন।’