পূর্ণাঙ্গ পরিচয় না পাওয়ায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত তিনজনের মধ্যে দুজনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে দিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।
নিহত তিন তরুণের মধ্যে সাইফুল ইসলাম (১৮) নামের একজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি দেবীদ্বার উপজেলায় দাফন করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ওই তিন তরুণের ছিন্নভিন্ন মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরে বেলা একটার দিকে সাইফুল ইসলামের মরদেহ তাঁর বাবা মোখলেছুর রহমান ও মা আছমা আক্তারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় অপর দুজনের লাশ দাফনের জন্য দেওয়া হয় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে। কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) সোহেল মোল্লা প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল বুধবার ভোরের কোনো এক সময় বুড়িচং উপজেলার মাধবপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ওই তিন তরুণের মৃত্যু হয়।
রেলওয়ে পুলিশের ভাষ্য, বুড়িচং উপজেলায় ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হওয়া তিনজনই সুবিধাবঞ্চিত তরুণ। তাঁরা স্টেশনে স্টেশনে ঘুরে মানুষের ফেলে দেওয়া বোতলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়াতেন।
রেলওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানান, আজ দুপুরে সাইফুলের ছিন্নভিন্ন মরদেহ দেবীদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের জয়পুরে গ্রামের বাড়ি নেওয়া হয়। সেখানে বাদ আসর জানাজা শেষে স্থানীয় সামাজিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
সাইফুলের মা–বাবা কুমিল্লা রেলস্টেশন পরিষ্কার এবং বোতল কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
ঘটনার পর রেলওয়ে পুলিশ জানায়, সাইফুল ছাড়া নিহত অপর দুজনের মধ্যে একজনের নাম তুহিন বলে জানা গেলেও আরেক তরুণের নামপরিচয় কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে তুহিনের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত তাঁর লাশ শনাক্তের জন্য কেউ আসেনি কুমিল্লা রেলওয়ে থানায়।
কুমিল্লা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মোল্লা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, অপর দুই তরুণের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য। কিন্তু তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না হওয়ায় পিবিআই ও সিআইডি ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করলেও তাঁদের পরিচয় মেলেনি। যার কারণে বাধ্য হয়ে ময়নাতদন্তের পর আজ দুপুরে দুজনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করার জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে দিয়েছি। সাইফুলের পরিবার প্রথমে জানায়, মরদেহ নিয়ে দাফন করার মতো জায়গা নেই। কিন্তু পরে তাঁরা এলাকায় যোগাযোগ করে লাশ দাফনের জায়গা ঠিক করে। এ জন্য তাঁরা সাইফুলের মরদেহ নিয়ে গেছে।’
এসআই সোহেল মোল্লা বলেন, ওই তিন তরুণের মৃত্যুর ঘটনায় লাকসাম রেলওয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ওই তিন তরুণ যেখানে কাটা পড়েছেন, সেটি নির্জন এলাকা। হয়তো মাদক সেবন করে অসাবধানতার কারণে তাঁরা ট্রেনে কাটা পড়েছেন। আবার চলন্ত ট্রেন থেকে নামার সময়ও এমনটা হতে পারে।