খুলনায় শিশুদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী শিশু জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে খুলনা বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলের দুই শতাধিক শিশু অংশ নেয়। সম্মেলনে পাঁচটি আলাদা আলাদা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওই সেমিনারে উঠে আসা আলোচনার ভিত্তিতে সমাপনী পর্বে শিশুরা ২১ দফা দাবি উত্থাপন করে। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করতে ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা পেতে এসব দাবি তুলে ধরে তারা।
সোমবার বিকেলে খুলনা নগরের সিএসএস আভা সেন্টারে ওই সম্মেলনের সমাপনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। জাগ্রত যুব সংঘ (জেজেএস) নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলন আয়োজনে সহযোগিতা করে জার্মান ফেডারেল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (বিএমজেড) এবং জার্মান বেসরকারি সংস্থা কিন্ডারনটহিলফে (কেএনএইচ)।
সম্মেলনে তুলে ধরা শিশুদের দাবিগুলো হলো দুর্যোগ সহনশীল বাসস্থান নিশ্চিত করা, বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের যাতায়াত নিশ্চিত করা, উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা সবার জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নিশ্চিত করা, লবণসহিষ্ণু সবজি-ফসল ও কৃষি উৎপাদনের সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা, সুন্দরবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নদ-নদী, খাল, জলাধার দখলমুক্ত করা ও নাব্যতা রক্ষা করা, সবার জন্য বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির নিশ্চয়তা দেওয়া, কৃষিকাজের সেচের পানি নিশ্চিত করা, দুর্যোগকালীন শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করা এবং দুর্যোগকালীন শিশু সুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া।
শিশুদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ এলাকায় দুর্যোগকালীন বিদ্যালয় চালু, জলবায়ু বাস্তুচ্যুত মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দেওয়া, বেড়িবাঁধ ভাঙন ও লবণাক্ততার কারণে বাস্তুচ্যুত পরিবারের নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগবিষয়ক আলোচনা ও পরিকল্পনায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা, জলবায়ু বিষয়ে শিশুদের নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই জীবিকার জন্য পর্যাপ্ত ও বহুমুখী সহায়তা নিশ্চিত করা, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা, দুর্যোগকালে শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা এবং উপকূলীয় এলাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসম্মত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা।
সম্মেলনের সেশনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিশু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের ঝুঁকিমুক্ত করতে দেশের জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিশুদের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। শিশু অধিকার রক্ষায় পরিকল্পনা না করলে ভবিষ্যৎ পৃথিবী অরক্ষিত হয়ে পড়বে। পরিবেশের ক্ষতি মানেই শিশুর ক্ষতি। সুতরাং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শুধু টাকাপয়সা, সম্পদ নয়, বরং অক্সিজেন, নদী, পরিবেশ রেখে যেতে হবে।
জেজেএসের নির্বাহী পরিচালক এ টি এম জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. রেজাউল করিম, খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম ও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। বিভিন্ন সেশনে বক্তব্য দেন ইউনিসেফের ফিল্ড অফিস প্রধান কাওসার হোসেন, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাকির হোসেন ও অধ্যাপক নাজমুস সাদাত, কেসিসির প্রধান নির্বাহী লস্কর তাজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন জলবায়ু গবেষক।
আয়োজকেরা জানান, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ হলো শিশু। দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই শিশুরাই। অথচ জলবায়ু প্রভাবজনিত আলোচনায় শিশুদের ব্যাপারটিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না। শিশুদের এই বিষয়গুলোকে আলোচনায় আনার জন্য শিশুদের নিয়ে শিশু জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এবারের আয়োজনটি চতুর্থতম। ওই সম্মেলনে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২০০ শিশু অংশগ্রহণ করেছে।