কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না জনবলসংকটে

সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের পদ শূন্য থাকায় জরুরি অস্ত্রোপচার ব্যাহত হচ্ছে

যশোর জেলার মানচিত্র

যশোরের বাঘারপাড়া ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক থাকার কথা ২১ জন। কিন্তু আছেন মাত্র ১২ জন। এক্স-রে যন্ত্রটি ১৮ বছর ধরে নষ্ট। দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি নষ্ট। জনবলসংকট ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম বিকল থাকায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না লোকজন। তবে এত সমস্যার মধ্যেও চিকিৎসকেরা ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে আধুনিক ভবন নির্মাণ করে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১০ সালের ২০ জুন তা উদ্বোধন করা হয়। জনবলকাঠামো অনুযায়ী এখানে ১০ জন বিশেষজ্ঞসহ ২১ জন চিকিৎসক নিয়োগ করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। নার্স ২৬ জনের মধ্যে ২৬ জন আছেন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর পদ ৬৮টি থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৪১ জন। আর চতুর্থ শ্রেণির ১৯টি পদের মধ্যে ১১টিই শূন্য।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে বহির্বিভাগে ৬ হাজার ১৩৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময়ে অন্তর্বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৮৪ জন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটিতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ জন রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী আসেন। একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি প্রায় ১৮ বছর ধরে বিকল। আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। জরুরি ক্ষেত্রে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) রোগীদের আলট্রাসনোগ্রাম করেন।

এখানে ১১ জন চিকিৎসা কর্মকর্তা ও একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়েছেন। এই লোকবল নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা রোগীদের সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।
মোশতাক আহমেদ, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চিকিৎসকেরা বলছেন, চিকিৎসক–সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে রোগীরা এখানে এসে অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানে সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের পদ শূন্য থাকায় জরুরি অস্ত্রোপচার ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে লোকবলের। ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। প্রশাসনিক অনুমোদন মিললেও ৫০ শয্যার আর্থিক সহায়তা ও জনবল পাওয়া যায়নি।

বাঘারপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামের রজব আলী (৭০) বলেন,‘আমার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে সাড়ে ৯টায় ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু ওষুধ পেয়েছি সকাল ১০টায়। এতে আমার ভোগান্তি হয়েছে।’

দোহাকুলা গ্রামের রেবা পরভীন (৫১) বলেন,‘ডাক্তার দেরিতে আসায় এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ডাক্তার পাঁচটি ওষুধ লিখলেও তিনটি ওষুধ হাসপাতাল থেকে দিয়েছে। দুটি দোকান থেকে কিনতে হবে। এতে আমার অসুবিধা হবে।’

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘এখানে ১১ জন চিকিৎসা কর্মকর্তা ও একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়েছেন। এই লোকবল নিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা রোগীদের সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

নানা সংকটেও সুন্দর পরিবেশে স্বাস্থ্যসেবা

সম্প্রতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান। চারপাশে লাগানো হয়েছে ফলদ-বনজ, ঔষধি গাছ। সবুজে ছেয়ে গেছে চারপাশ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতর ও বাইরে ঝকঝকে। মূল ফটক পেরিয়ে কিছুটা সামনে রোগীদের দীর্ঘ সারি। পাশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী কর্নার, কিশোর–কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা কর্নার, মাতৃদুগ্ধ কর্নার, কমিউনিটি হেলথ কর্নার। রোগীরা আসছেন, লাইনে দাঁড়িয়ে পাঁচ টাকা দিয়ে টিকিট কাটছেন। এরপর চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করছেন। পরে ফটকের বাইরের দিকে ওষুধ কাউন্টার থেকে ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অরূপ জ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘গত বছরের জুনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে এখানে যোগদান করি। এরপর রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করি। সে অনুযায়ী সেগুলো বাস্তবায়ন করছি। নানা সংকটের মধ্যেও রোগীরা ভালো স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। আর এই কাজে সহকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ—সবাই সহযোগিতা করছেন।’