এবার আউলিয়ার ঘাটে নিরাপত্তা জোরদার

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার আউলিয়ার ঘাটে গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর নৌকাডুবিতে মারা যান ৭২ জন।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বোদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাটে নৌকায় পারাপার হচ্ছেন পুণ্যার্থীরা। গতকাল দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

আউলিয়ার ঘাটের দুই প্রান্তে রয়েছেন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। ৪টি নৌকায় সর্বোচ্চ ২৫ জন করে পারাপার করা হচ্ছে যাত্রীদের। প্রতিটি নৌকায় রাখা হয়েছে লাইফ জ্যাকেট।

যাত্রীদের সতর্কতার সঙ্গে পারাপারের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছে হ্যান্ড মাইকে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত করতোয়া নদীর ওই ঘাটে এমন চিত্র দেখা যায়।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামহাট ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাটে গত বছর সেপ্টেম্বরে নৌকাডুবিতে মারা যান ৭২ জন। তাঁদের স্মরণে এ বছর ব্যানার টানানো হয়েছে।

নৌকায় বেশি লোক নেওয়া হচ্ছে না। গত বছরও যদি এমন নিরাপত্তা থাকত, তাহলে হয়তো এত প্রাণহানি হতো না।’
সুজেন্দ্র বর্মণ, বোদার জায়গীর পাড়ার বাসিন্দা

আউলিয়ার ঘাট পেরিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটারে এগোলেই বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের ত্রিস্রোতা মহাপীঠধাম বোদেশ্বরী শক্তিপীঠ মন্দির। সেখানে প্রতিবছরের মতো গতকাল শনিবার দেবী দুর্গার আবাহন উপলক্ষে মাতৃপূজা, শিবপূজা, বিষ্ণুপূজা ও চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে মহালয়া।

এবার মহালয়ায় অধিকাংশ পুণ্যার্থী নদীপথে আউলিয়ার ঘাট পার না হয়ে সড়কপথ ব্যবহার করেছেন। তাঁদের পঞ্চগড়-ভাউলাগঞ্জ সড়ক ও দেবীগঞ্জ-বড়শশী সড়ক দিয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেশি রাস্তা ঘুরে যেতে হয়েছে।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক মানুষ নিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। যাত্রীদের অধিকাংশই বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ঘাট থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। ওই ঘটনায় ৭১ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছিল। নিখোঁজ একজন।

এবার মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা বোদা উপজেলার জায়গীর পাড়া এলাকার সুজেন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘এবার একাই এসেছি। পরিবারের কাউকে নিয়ে আসিনি। এখানে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন দেখে ভালোই লাগল। নৌকায় বেশি লোক নেওয়া হচ্ছে না। গত বছরও যদি এমন নিরাপত্তা থাকত, তাহলে হয়তো এত প্রাণহানি হতো না।’

দিনাজপুর থেকে বোদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ায় যোগ দিতে এসেছেন বিজয় চন্দ্র রায় ও অনিতা রানী দম্পতি। বিজয় চন্দ্র রায় বলেন, ‘গত বছরের নৌকাডুবির কথা ভেবে এবার দেবীগঞ্জ হয়ে সড়কপথে মহালয়ায় এসেছি। ঝামেলা এড়াতে এবার নৌকা দিয়ে পারাপার হইনি।’

ঘাট ইজারাদার আবদুর রাজ্জাক বলেন, এবার মহালয়া উপলক্ষে যাত্রী পারাপারের জন্য চারটি নৌকা রাখা হয়েছে। শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় সর্বোচ্চ ২৫ জন আর বইঠা দিয়ে চালানো নৌকায় ১৭ জন পারাপারের অনুমতি রয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্ধারকারী হিসেবে একটা নৌকা রাখা হয়েছে শুধু ফায়ার সার্ভিসের জন্য। এবার নৌকায় শুধু মানুষ পারাপার করা হচ্ছে।

মোটরসাইকেল এবং ভ্যান পারাপার করা হচ্ছে না। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার যাত্রী খুবই কম। নৌকাডুবির ঘটনার ভয় হয়তো মানুষের এখনো কাটেনি। এ জন্য দূর দিয়ে ঘুরে অনেকেই মহালয়ায় যাচ্ছেন।

বোদেশ্বরী মন্দিরের সভাপতি নীতীশ কুমার মুকুল বকশী বলেন, ‘গত বছরের নৌকাডুবির ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমরা এবারের মহালয়ার অনুষ্ঠান অনাড়ম্বরভাবে পালন করছি। এ জন্য কোনো পোস্টার, লিফলেট ছাপানো হয়নি। এমনকি মাইকিংও করা হয়নি। এরপরও হাজারো পুণ্যার্থীর উপস্থিতিতে মন্দির প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে উঠেছে।’