কারাগারে গরু পালনে সরকারি কর্মচারী ও অর্থ ব্যবহার করা যাবে না
দেশের কোনো কারাগারে গরু পালনে সরকারি কর্মচারী ও অর্থ ব্যবহার না করতে নির্দেশনা জারি করেছে কারা অধিদপ্তর। আজ মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত আটটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা দেশের ৬৮টি কারাগারের জন্য প্রযোজ্য হবে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের সই করা এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, কারা কর্মকর্তারা গরু পালনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধিবিধান অনুসরণ করছেন না। এখন থেকে গরু পালনের ক্ষেত্রে কারা অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তাকে কারা মহাপরিদর্শকের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি মানতে হবে কিছু শর্ত। এগুলো হলো কারাগারে দুটির বেশি গরু পালন করা যাবে না, কারা এলাকায় গরু পালনের ক্ষেত্রে কারাগারে পরিবেশ কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না, গরু পালনের ক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মচারী নিযুক্ত করা যাবে না, ব্যয় করা যাবে না সরকারি কোনো অর্থ, ব্যক্তিগত গরু পালনের কাজে বন্দীদের ব্যবহার করা যাবে না, সরকারি কোনো স্থানে ঘাস চাষ করা যাবে না, গরু পালন কাজে ব্যবহৃত পানি ও বিদ্যুৎ বিল ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করতে হবে, গরুর সংখ্যা দুইয়ের অধিক নেই এবং নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে— প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে লিখিত প্রত্যয়ন দিতে হবে। গরু পালনের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত শর্তাবলির ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব শর্ত মেনে গরু পালন করতে হবে।
গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘চট্টগ্রাম কারাগারে দুধ বিক্রি করছেন ডিআইজি প্রিজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাবিধি অনুযায়ী, কোনো কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্দীদের কাছে কোনো সামগ্রী বিক্রি কিংবা ভাড়া দিতে পারেন না। তা ছাড়া এভাবে তরল দুধ সরবরাহ করা বন্দীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে জানিয়েছেন সাবেক কারা কর্মকর্তারা। অভিযুক্ত চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) টিপু সুলতান চট্টগ্রামে যোগ দেন গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি। ময়মনসিংহ থেকে বদলি হয়ে আসার সময় গরুগুলো সঙ্গে নিয়ে আসেন তিনি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পূর্ব সীমানা দেয়ালসংলগ্ন এলাকায় নিজের কার্যালয় ও বাংলোর পাশে খামার গড়ে তোলেন তিনি। খামারে উৎপাদিত দুধ তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে বিক্রি করে আসছিলেন।
কারাগারে বাইরে থেকে দুধসহ রান্না করা কোনো খাবার কারাবন্দীদের দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান সে নিয়ম মানেননি। ১০ মাস ধরে নিয়মিত তাঁর খামার থেকে গড়ে ২০ লিটার করে দুধ কারা ক্যানটিনে সরবরাহ করা হতো। বাইরে খুচরা মূল্য ৮০ টাকা লিটার, পাইকারি দর ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ডিআইজি প্রিজন কারাগারে বিক্রি করেছেন ১০০ টাকা দরে। সেই হিসাবে দৈনিক ২ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করতেন তিনি।
প্রথম আলোয় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর কারাগারে দুধ বিক্রি বন্ধ করে দেন ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান। তবে তাঁর খামারে এখনো ১৩টি গরু ও বাছুর রয়েছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. আলমগীর ও সুরেশ চন্দ্র দাস এগুলো এখনো দেখভাল করছেন। সরকারি টাকায় তাঁদের বেতন হলেও ডিআইজি প্রিজনের গরু খামার দেখাশোনা ও দুধ বিক্রি করে আসছেন তাঁরা। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতানের বক্তব্য জানতে চেয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন না ধরায় বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী সুরেশ চন্দ্র দাস আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এখনো খামারের গরুর দেখাশোনা ও দুধ বিক্রি করেন।