সুনামগঞ্জে আমনের ভালো ফলনে কৃষকেরা খুশি

সুনামগঞ্জে আমন ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরা। সদর উপজেলার মইনপুর এলাকা থেকে তোলা ছবি
ছবি: প্রথম আলো

এবার সুনামগঞ্জে এপ্রিলে পাহাড়ি ঢলে জমিতে এবং পরে জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায় ঘরের গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকের বোরো ধান। এ কারণে বোরোপ্রধান হাওরের কৃষকেরা ছিলেন হতাশ। এমন অবস্থায় আমনের আবাদ নির্বিঘ্ন ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা খুশি।

সুনামগঞ্জে এখন আমন ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকেরা নতুন ধান কেটে গোলায় তুলছেন। তবে জেলার যেসব উপজেলায় উঁচু জমি আছে, সেসব উপজেলায় আমনের আবাদ হয় বেশি। ভাটি এলাকায় আমনের আবাদ হয় কম। কৃষকেরা জানান, এবার আমনের বীজতলা তৈরি, চারা রোপণের সময় কোনো সমস্যা হয়নি। অন্য বছর আমন আবাদের সময় ভারী বৃষ্টি, বন্যাসহ নানা কারণে বিপাকে পড়েন কৃষক। এবার তেমন হয়নি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের প্রধান ফসল বোরো ধান হলেও আমন আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এবার গত বছরের চেয়ে এক হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ বেশি হয়েছে। বন্যার পর জেলায় আমন আবাদে ১০ হাজার কৃষককে ৫ কেজি করে বীজ এবং ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সার বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে।

এবার সুনামগঞ্জে আমন ধানের আবাদ হয়েছে ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। পয়লা অগ্রহায়ণ থেকে শুরু হয়েছে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আমন ধান কাটার উৎসব। নতুন ধানের গন্ধ এখন হাওরের উজান এলাকার বাতাসে।

সুনামগঞ্জের অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১৪ হাজার ৬২৫, ছাতকে ১২ হাজার ৭৫৫, সুনামগঞ্জ সদরে ১১ হাজার ৬১০, জগন্নাথপুরে ৯ হাজার ৫৫৫, বিশ্বম্ভরপুরে ৮ হাজার ৭৫৫, তাহিরপুরে ৬ হাজার ৩৩৫, ধর্মপাশায় ৪ হাজার ৫৭০, শান্তিগঞ্জে ৪ হাজার ২১০, দিরাইয়ে ২ হাজার ৭২৫, শাল্লায় ২ হাজার ১৩০ ও জামালগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। জেলায় এবার সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে ব্রি-৪৯ ও বিআর ২২ জাতের ধান। ব্রি-৪৯ ধানের প্রতি একরে ফলন হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ মণ এবং বিআর ২২ জাতের হয়েছে প্রতি একরে ৪০ থেকে ৪৫ মণ। কৃষকেরা বলেন, বন্যায় সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন তাঁরা। আমন ধান ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস দিয়েছে। এরপর বোরো আবাদ ও ধান গোলায় তুলতে পারলেই সংকট কাটবে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মইনপুর গ্রামের কৃষক সমুজ আলী (৫৫) বলেন, ‘এবার বন্যায় ধান, ঘরবাড়ি সব গেছে। মানুষ এখনো বিপদে আছেন। এর মধ্যেই নিজের দুই একর জমি এবং অন্য আরেকজনের আরও এক একর জমি বর্গা হিসেবে আমন ধানের আবাদ করেছিলাম। এখন ধান কাটছি। এই ধানে মনে আনন্দ পাচ্ছি। ঘরে তো কিছুই না। আমরা কী যে কষ্টে আছি, সেটা কেউ বুঝবে না।’

একই গ্রামের আরেক কৃষক দিদার মিয়া (৬০) বলেন, সব কৃষকই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। ঋণ করে চলতে হচ্ছে। আমন ধানে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। সামনের বোরো মৌসুমটা ভালো হলেই হাওর এলাকার কৃষকেরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

সুনামগঞ্জে গত এপ্রিল মাসে উজানের পাহাড়ি ঢলে বেশ কয়েকটি হাওরে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। এরপর জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায় ঘরের গোলায় পানিতে ভিজে নষ্ট হয় অনেক কৃষকের ধান। শুধু ধান নয়, বন্যায় অনেক কৃষকের বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে ঘরের সব মালামাল।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, সুনামগঞ্জের কৃষকেরা এবার এমনিতেই সংকটে আছেন। এ অবস্থায় আমন ধান তুলতে পেরে তাঁরা খুশি। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কৃষকেরা সহযোগিতা পাননি। বোরো মৌসুম শুরু হচ্ছে। সরকার যেন হাওরের কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয় এবং পাশে থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, সুনামগঞ্জ হাওর এলাকা। ভৌগোলিক কারণেই এখানে আমন আবাদ কম হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে। আমনের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা খুশি।