টানা বৃষ্টিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বান্দরবান, পুরো জেলা বিদ্যুৎহীন

পাঁচ দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বসতঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেনছবি: প্রথম আলো

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পাঁচ দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি যাওয়ার সড়ক দুটি পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলার সঙ্গে সড়কপথে সারা দেশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

শহরের একমাত্র বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি প্লাবিত হওয়ায় গতকাল রোববার থেকে পুরো জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। নেটওয়ার্ক না থাকায় মুঠোফোন যোগাযোগব্যবস্থাও কার্যত অচল হয়ে আছে।

শহরের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত সাড়ে আট হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা তাসলিমা সিদ্দিকা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের জন্য ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা শহরে বহু মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। বান্দরবান জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদ–নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলায় বিদ্যুৎ না থাকায় এ–সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। বাসাবাড়ি ও রিসোর্টে আইপিএসের বিদ্যুৎও ফুরিয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের গতকাল রাত থেকে অনেকটা অন্ধকারেই কাটাতে হয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের অনেক এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় লোকজন অপেক্ষাকৃত উঁচু সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন
ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, শহরের অধিকাংশ এলাকার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটিও পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সে কারণে তাঁরা বাধ্য হয়ে সেটি বন্ধ রেখেছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ চালুর বিষয়টি পানি কমার ওপর নির্ভর করছে। পানি না কমলে এটি চালু করা সম্ভব নয়।

প্রথম আলোর প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক খায়রুল কবির পেশাগত কাজে বান্দরবান শহরে গিয়েছেন। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় কোনো যানবাহন না পেয়ে আটকা পড়েছেন তিনি। পাহাড়ের উঁচু একটি জায়গায় গিয়ে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক পান। ঘটনাস্থল থেকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি বলেন, ‘আজ সকাল ছয়টা থেকে আমি ও আমার এক সহকর্মী বান্দরবান শহর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছি। মোবাইলে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। কিছু দূর এগিয়ে জানতে পেরেছি, বাসস্ট্যান্ড এলাকা পানিতে ডুবে গেছে, তাই কোনো বাস চলছে না। একজন জিপচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু সড়ক ডুবে যাওয়ায় তিনিও যেতে রাজি হননি।’

খায়রুল জানান, তিনি যে রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন, সেখানে তাঁর মতো অনেকেই আটকা পড়েছেন। শহরের সড়কে অনেক স্থানীয় মানুষকে আসবাবপত্রসহ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যেতে দেখেছেন তিনি। বেলা সাড়ে তিনটার দিকেও সেখানে ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল।

জেলা শহরের হিল টপ রিসোর্টে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন লিজা আক্তার নামের একজন গৃহিণী। তিনি জানিয়েছেন, জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের পাশে তাঁর বাসা। তাঁর ঘরটি পানিতে ডুবে গেছে। ঘরের আসবাবপত্র কিছুই আনতে পারেননি। শুধু মূল্যবান কিছু জিনিসপত্র ও সন্তানদের বইপুস্তক নিয়ে তাঁরা এই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন।