দুই আসনে জাপাকে ছাড় দিতে নারাজ আ.লীগ

আওয়ামী লীগ

নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) ও নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে জাতীয় পার্টিকে এবার ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে এ দুটি আসনে লড়তে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ২০ নেতা। তাঁরা নারায়ণগঞ্জকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে উল্লেখ করে কোনোভাবেই জোটের কাছে আসন দুটি ছাড় না দেওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

তবে জাতীয় পার্টির নেতাদের দাবি, দুটি আসন জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাঁটি। মহাজোট হলে দুটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীই থাকবে। না হলে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এককভাবে নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি দীর্ঘ দিন ধরে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং বিকেএমইএর সভাপতি। এর আগে তাঁর প্রয়াত বড় ভাই নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির হয়ে আসনটির চারবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। এবার আসনটিতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য দেখতে চান দলটির স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁরা এ দাবি জানিয়ে আসছেন।

নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর নিয়ে গঠিত আসনটিতে এবার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ছয়জন। তাঁরা হলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত (বাদল), মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত ও মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহাম্মদ রেজা।

নারায়ণগঞ্জকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক রয়েছে। আওয়ামী লীগের ভোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমপি হয়েছেন। তাই দলের কাছে আমাদের দাবি, আর জাতীয় পার্টিকে ছাড় নয়, এখানে নৌকার প্রার্থী দেওয়া হোক। আমরা নৌকা চাই। দীর্ঘ দিন ধরে দলের জন্য রাজনীতি করছি। দলের কাছে প্রত্যাশা, দল আমাকে এ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবে।’

আবদুল হাই বলেন, ‘দলীয় এমপি না থাকায় দল এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজাকার ও জাতীয় পার্টির হাতে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা নির্যাতিত হচ্ছেন। আমরা দীর্ঘ দিন ধরে জেলার পাঁচটি আসনেই নৌকা চেয়ে আসছি। দলের কাছে আমরা এ আসনে নৌকা চাই। যাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক, আমরা নৌকা চাই।’

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে গত দুই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন লিয়াকত হোসেন (খোকা)। দুইবারই মহাজোটের শরীক হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে নির্বাচন করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য। আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন ১৪ জন।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেওয়া নেতারা হলেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ্ আল কায়সার, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোশারফ হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য এ এইচ এম মাসুদ, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান, আবু জাফর চৌধুরী, দীপক কুমার বনিক, এরফান হোসেন, মারুফুল ইসলাম, মনির হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাবুল ওমর, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা (বাবলী), নারায়ণগঞ্জ জেলা তাঁতী লীগের সাবেক সভাপতি জসীম উদ্দিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আনোয়ার হোসেন।

নৌকার সংসদ সদস্য থাকলে এ আসনে গত ১০ বছরে আরও বেশি উন্নয়ন হতো বলে মনে করেন আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী কায়সার হাসনাত। এবারের নির্বাচনে আসনটি আর জাতীয় পার্টিকে দিতে নারাজ তিনি। মনোনয়নপ্রত্যাশী শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নৌকা চাই। আমি নৌকার প্রার্থী। দলীয় সভানেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে নির্বাচন করব।’

তবে নারায়ণগঞ্জের দুটি আসনকে জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাঁটি দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এবার মহাজোট থাকলে জাতীয় পার্টি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে জননেত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের দুটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বহাল রাখবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। মহাজোট না হলে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য দুটি আসনে প্রচুর কাজ করেছেন। আমরা এককভাবে নির্বাচন করলেও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচনের সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’