গোয়ালন্দের চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার উৎপাত, ১৫০ কৃষককে দেওয়া হলো গামবুট
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের মতো বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়েছে। এক মাসে চারজন এই সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। কেউ চিকিৎসাধীন, কেউ সুস্থ হয়ে বাড়িতে আছেন। রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে অনেকে ফসলি জমিতে যেতে সাহস পাচ্ছেন না।
বিষধর এই সাপের কবল থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গম চরাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে আজ বুধবার দুপুরে গামবুট বিতরণ করা হয়।
১৮ এপ্রিল চর মজলিশপুর এলাকায় মালেকা বেগম, ১৬ এপ্রিল চর মহিদাপুর এলাকায় আলমাস শেখের ছেলে সাগর শেখ, এর আগে আবদুর রহমানের ছেলে সুরুজ শেখ এবং আসলাম মিয়া নামের কৃষককে কামড় দেয় রাসেলস ভাইপার। তাঁদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাসেলস ভাইপারের কামড়ে গত বছর এই মৌসুমে গোয়ালন্দের চরাঞ্চলে এক কিষানিসহ তিন কৃষক মারা যান।
রাসেলস ভাইপার থেকে রক্ষা পেতে উপজেলার চর দৌলতদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১৫০ জন কৃষকের মধ্যে গামবুট বিতরণ করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান, উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনিরউজ্জামান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লক্ষ্মণ কুমার, ইমরান হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আলমাস শেখ নামের একজন কৃষক জানান, ১৫-১৬ দিন আগে উজানচর মহিদাপুর এলাকায় কৃষক সুরুজ শেখ ধান কাটতে গেলে রাসেলস ভাইপার কামড় দেয়। তাঁকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনো তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, ‘আরও দুই কৃষককে কামড় দিলে আতঙ্কে আমরা খেতে যেতে পারিনি। গামবুট পেয়ে এখন নিশ্চিন্তে খেতে যেতে পারব। অনেক ফসল জমিতেই নষ্ট হয়ে গেছে। শ্রমিকেরাও ভয়ে খেতে নামছিল না। এখন সবাই খেতের ফসল ঘরে আনতে পারব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোকন উজ্জামান জানান, দুই বছর ধরে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর কিছুটা কমলেও ইতিমধ্যে কয়েকজনকে কামড় দিয়েছে। এই সাপ সাধারণত হাঁটুর নিচের দিকে কামড় দেয়। যে কারণে গামবুট সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই সচেতনতা সৃষ্টিতে কৃষকের হাতে গামবুট দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদুর রহমান বলেন, রাসেলস ভাইপারের আতঙ্কে কৃষকেরা খেতের ফসল তুলতে পারছিলেন না। তাঁরা আতঙ্কিত ছিলেন। মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসায় কৃষকদের কথা চিন্তা করে তাঁদের সাপের কামড় থেকে বাঁচাতে গামবুট দেওয়া হয়েছে। চরাঞ্চলের ১৫০ জনের মধ্যে গামবুট দেওয়া হলো। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নের চাষিদের মধ্যে গামবুট বিতরণ করা হবে। কৃষকদের সচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিংসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন এস এম মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্যান্য উপজেলার কোথাও দেখা না গেলেও গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উৎপাত বেড়েছে। কামড় দেওয়া রোগীদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে আমাদের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান নেই।’