কুষ্টিয়ায় স্ত্রীসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা মামলায় সাবেক এএসআইয়ের মৃত্যুদণ্ড

পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক এএসআই সৌমেন রায়ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় দিনদুপুরে স্ত্রী-সন্তান ও যুবককে গুলি করে হত্যার দায়ে পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়কে (৩৪) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমীন এ রায় দেন।

মামলার একমাত্র আসামি সৌমেন পলাতক। তিনি মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আসপা গ্রামের সুনীল রায়ের ছেলে। সর্বশেষ খুলনার ফুলতলা থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন সৌমেন।

মামলা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ জুন বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকায় একটি ভবনের নিচে স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫), আসমার ছেলে রবিন (৫) এবং আসমার বন্ধু শাকিল খানকে (২৮) সরকারি পিস্তল দিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন সৌমেন। এ ঘটনার পরপরই পুলিশ তাঁকে ঘটনাস্থল থেকে তাঁর ব্যবহৃত সরকারি পিস্তলসহ আটক করে। একই দিন রাতে এএসআই সৌমেন রায়কে একমাত্র আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম। ঘটনার পরপরই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।

তৎকালীন কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হকের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সৌমেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নিশিকান্ত সরকার সৌমেনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

এদিকে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর উচ্চ আদালত (হাইকোর্ট) থেকে জামিন নেন সৌমেন রায়। এরপর কুষ্টিয়া আদালতে বারবার আত্মসমর্পণের দিন ধার্য থাকলেও তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পলাতক সৌমেন।

কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, সৌমেনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তিনি পলাতক রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

মামলার বাদী হাসিনা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জেনেছেন সৌমেন হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। আদালত সৌমেনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় তিনি খুশি। তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানান বাদী।

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় কর্মরত থাকার সময় একটি মামলাকে কেন্দ্র করে সৌমেনের সঙ্গে আসমার পরিচয় হয়। পরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সময় সৌমেন নিজেকে মো. সুমন হোসেন হিসেবে পরিচয় দেন। সুমন নামেই মুসলিম বিধানে আসমাকে বিয়ে করেন। সৌমেন আসমার তৃতীয় স্বামী ছিলেন। বিয়ের পর থেকেই কুষ্টিয়ার আড়ুয়াপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন সৌমেন–আসমা দম্পতি। এরপর সৌমেন খুলনার ফুলতলা থানায় বদলি হওয়ার পর শাকিল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান আসমা। এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি সৌমেন। সেই ক্ষোভ থেকেই প্রকাশ্যে স্ত্রী আসমা, আসমার দ্বিতীয় স্বামীর ছেলে রবিন এবং শাকিলকে গুলি করে হত্যা করেন সৌমেন।