আবু নাসের হাসপাতালে পড়ে আছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা দামের অ্যাম্বুলেন্স

২০২০ সালে আইসিইউ সুবিধা–সংবলিত এই অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হয়। গত  ২৭ আগস্ট যশোরে যাওয়ার পর এটির ফ্যানবেল্ট নষ্ট হয়ে যায়।

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের গ্যারেজে রাখা আইসিইউ সুবিধা সংবলিত অ্যাম্বুলেন্স
ছবি:প্রথম আলো

খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) সুবিধা–সংবলিত বিশেষায়িত  অ্যাম্বুলেন্সটি অচল হয়ে পড়ে আছে। এতে মুমূর্ষু রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না।

হাসপাতালের যান পরিচালন শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট দুপুরে যশোর সদর থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে একজন রোগীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবু নাসের হাসপাতালের ওই অ্যাম্বুলেন্স খুলনা থেকে যশোরে যায়।

যশোরে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটির ফ্যানবেল্ট নামের একটি যন্ত্র  নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেই রোগীকে আর বহন করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়ভাবে একটি ফ্যানবেল্ট লাগিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি খুলনায় ফিরে আসে। এরপর থেকে রোগীরা অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহারের চাহিদা জানালেও ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি খুলনায় পাঠানো হয়। ছয় মাস বসে থাকার পর ২০২০ সালের ৩০ জুন এটা চালু হয়। এখন পর্যন্ত  ১১৭ জনের মতো রোগী অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা পেয়েছেন। চলতি বছরে  ১২ জন রোগী এটি ব্যবহার করেছেন। তবে এটি বেশ ব্যয়বহুল। প্রতি কিলোমিটার ৫০ টাকা খরচ ধরা হয়। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাতায়াত ৪৪০ কিলোমিটার ধরে এর ভাড়া আসে ২২ হাজার টাকার মতো। এ ছাড়া ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুর টোল বাবদ আরও ৩ হাজার ২০০ টাকার মতো রোগীকে পরিশোধ করতে হয়। এর বাইরে চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ান নেওয়ার জন্য আলাদা খরচ আছে। এ ছাড়া বরিশাল, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, যশোরের অনেকে  এটির সেবা নিয়ে থাকেন। তখন সেই  দূরত্বের ওপর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালের পার্কিং গ্যারেজে রাখা আছে। সম্পূর্ণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সটির ভেতরে উন্নত প্রযুক্তির পালস অক্সিমিটার; ইসিজি যন্ত্র; সিরিঞ্জ পাম্প; নারী, পুরুষ ও শিশুদের জন্য আলাদা ভেন্টিলেটর মেশিন; সাকার মেশিন; মনিটর; অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেটের সাতটি হাসপাতালেও আধুনিক একই ধরনের সাতটি অ্যাম্বুলেন্স আছে।

আইসিইউ সুবিধা–সংবলিত অ্যাম্বুলেন্স চালুর ব্যাপারে ২০২০ সালের দিকে আবু নাসের হাসপাতালের  পরিচালক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি লিখে এটি চালুর জন্য গাইডলাইন (কী কী সাপোর্ট থাকবে, রোগীদের কী কী সুবিধা দেওয়া হবে, ভাড়া কত হবে) চেয়েছিলেন। তবে এটা নিয়ে নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। পরে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র স্থানীয়ভাবে একটি বোর্ড করে এটি চালু করার উদ্যোগ নিতে বলেন। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর প্রতিনিধিসহ অন্যদের নিয়ে একটা বোর্ড করে রেজল্যুশন  পাস করিয়ে নেয়। সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা ভাড়া হলেও এক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় প্রতি কিলোমিটার ৫০ টাকা। এখন সেই নির্দেশনায় চলছে অ্যাম্বুলেন্সটি।

নষ্ট হয়ে যাওয়া ফ্যানবেল্টের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের গাড়িচালক ও অ্যাম্বুলেন্সটির ইনচার্জ মো. গোলাম রসুল বলেন, ইঞ্জিনের ফ্যান, শীতাতপনিয়ন্ত্রের কম্প্রেসার ও ডায়নামোর সঙ্গে ফ্যানবেল্ট যুক্ত থাকে। অ্যাম্বুলেন্সটির দাম ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার মতো। আর নষ্ট হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশটির দাম ১২ হাজার টাকার মতো। ইতালি থেকেই আসল যন্ত্রাংশ আনার চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল কতৃ৴পক্ষ গ্রহণ করার পর ১ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি ছিল। সেটি অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন শুধু ফ্যানবেল্ট নয়, অ্যাম্বুলেন্সটির বেশ কিছু যন্ত্রাংশ নাজুক অবস্থায় আছে। সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের পাঁচটি করে স্প্রিং পাতি  থাকে। এই অ্যাম্বুলেন্সের স্প্রিং পাতি (শক অ্যাভজর্ভ করে) আছে দুটি। সেটি ভেঙে যাওয়ায় ঝালাই করে চালানো হচ্ছে। খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে বেশ কিছু ছোট কালভার্ট ও ডাইভারশন থাকায় ঝাঁকুনিতে সেটি যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। আবার প্রতি পাঁচবার ঢাকা যাওয়া–আসার পর অ্যাম্বুলেন্সটির ব্রেক প্যাড বদলাতে হয়। আসল যন্ত্রাংশ না পাওয়ায় টেকসই না হলেও স্থানীয়ভাবে সেগুলো করা হয়।

হাসপাতালের উপপরিচালক এস এম মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, তুরস্কের সরকারের উপহার হিসেবে ওই অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া গিয়েছিল। এটা মার্কেটের কমন আইটেম না। এ কারণে অ্যাম্বুলেন্সটির ছোট একটি যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে গেলে সেটা জোগাড় করা খুবই কষ্ট। মাঝেমধে৵ এটাতে ঝামেলা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে আমরা ঠিকঠাক করেছি। সম্প্রতি নষ্ট হয়ে যাওয়া ফ্যানবেল্ট জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। এটি শিগগিরই চালুর চেষ্টা চলছে।