কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু ২৩ জুন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার ওএসডি
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হবে ২৩ জুন। তবে অফিস খোলা হবে ৯ জুন থেকে। বুধবার বিকেলে সিন্ডিকেটের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির রাতে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ১ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষকদের ‘থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়ার’ হুমকি দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। সিন্ডিকেটে শিক্ষকদের বেশির ভাগ দাবি মেনে নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় সিন্ডিকেটের সভা শুরু হয়। সিন্ডিকেট সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের দপ্তরের পাশের একটি কক্ষে ওই সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিন্ডিকেটের সভাপতি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন। সভায় ১৬ জন সিন্ডিকেট সদস্যের মধ্যে ১১ জন উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ওই সভা চলে।
সভায় বলা হয়, ৬ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত পবিত্র ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি। ২১ ও ২২ জুন শুক্র-শনিবার। এ অবস্থায় ২৩ জুন থেকে ক্লাস শুরু করতে হবে। অফিস খোলা হবে ৯ জুন থেকে। পরে সিন্ডিকেট সদস্যরা ঐকমত্য হয়ে ওই সিদ্ধান্তে পৌঁছান। সভায় শিক্ষকদের সাত দফা দাবি নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়। দাবিগুলোর বেশির ভাগই পূরণ হওয়ার পথে বলে সিন্ডিকেটকে জানানো হয়।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের বাংলোতে শিক্ষক সমিতির নেতা, উপাচার্য ও উপাচার্যপন্থী শিক্ষকেরা প্রাথমিক আলোচনায় বসেন। সেখানে বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সহ–উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ২৩ জুন থেকে ক্লাস শুরু হবে। ৯ জুন থেকে অফিস খোলা। শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবির বেশির ভাগই পূরণ করা হয়েছে। কিছু দাবি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপাচার্যের বাগবিতণ্ডা হয়। ওই সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা ও কর্মকর্তা সমিতির এক নেতা শিক্ষকদের হেনস্তা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি তিন দফা দাবি দেয়। সেই সঙ্গে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তী সময়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ১৯ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক সমিতি। এরপর ঈদুল ফিতরের বন্ধ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়। কিন্তু তিন দিন ক্লাস হওয়ার পর আবারও আন্দোলন শুরু হয়।
২৫ এপ্রিল সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন, কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান ও প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর দপ্তরে তালা দেয়। একই সঙ্গে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। ২৭ এপ্রিল বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামানের গাড়ি প্রধান ফটকে আটকে দেয়। পরদিন ২৮ এপ্রিল বেলা একটায় উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন প্রশাসনিক ভবনের নিজ দপ্তরে যাওয়ার জন্য ছাত্রলীগের সাবেক অন্তত ২০ জন নেতা ও তাঁর অনুসারী কিছু শিক্ষককে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এই সময় শিক্ষক সমিতির নেতারা তাঁদের বাধা দেন। এই সময়ে উপাচার্য ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি, কিলঘুষি ও হামলায় জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষক হেনস্তার শিকার হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাসহ ২০ জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও শিক্ষক সমিতির ছয়জনের নামে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন।
৩০ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে শিক্ষকদের দাবি দাওয়া ও ২৮ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে দুটি তদন্ত কমিটি হয়। এরপর থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয় খোলেনি। তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত টানা ১৮ কর্মদিবস শিক্ষক সমিতি প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে।