১৪ বছর আগের ‘হত্যাকাণ্ডের’ ঘটনায় সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ আ.লীগের ৪১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসানসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪১ নেতা-কর্মীর নামে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তাইফুর রহমান।
১৪ বছর আগে নিজের ছোট ভাই ও ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান ‘হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগে মামলাটি করেন তাইফুর। এতে অন্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম। এ ছাড়া আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে।
আদালতকের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিষ রায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আমলে নিয়ে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী খন্দকার শাহাব উদ্দিন ও আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. কাইয়ুম আকন্দ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর সরকারবিরোধী আন্দোলন বন্ধ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদল নেতা মো. জিয়াউর রহমানকে কুপিয়ে জখম করা হয়। অন্য আসামিদের সঙ্গে নিয়ে নিজ বাসায় এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও এমপি মো. মাহবুবুর রহমান। এতে এস এম রাকিবুল আহসান, বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, মঞ্জুরুল আলম অর্থ দেন। এ মামলার প্রধান আসামি মাহবুবুর রহমানসহ উল্লিখিত আসামিদের নির্দেশে অন্য আসামিরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে করে জিয়াউরের বাড়িতে যান। সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁকে বসতঘর থেকে স্থানীয় পাখিমারা বাজারে আনা হয়।
এরপর জিয়াউরকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত, পা, বুক, পিঠে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন আসামিরা। একপর্যায়ে শরীরের হাড় ভেঙে গেলে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে যান জড়িতরা। ওই সময় জিয়াউরের বাড়ি থেকে ১৭টি গরু ও ১৬টি ছাগল লুট করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২০১৫ সালের ২৫ মে নিজ বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়।
বাদী মো. তাইফুর রহমান বলেন, ‘জিয়ার মৃত্যুর পর কলাপাড়া থানা-পুলিশকে জানানো হয় এবং মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। মামলার প্রধান আসামি মাহবুবুর রহমান তখন রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন। তাঁর নির্দেশে পুলিশ আমাদের বাড়িতে যায় এবং জিয়ার মৃতদেহ দ্রুত দাফনের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তখন আমি কলাপাড়া থানা ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে আদালত এবং থানা আমার মামলা নেয়নি।’
আদালতের আদেশটি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ। তিনি আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, এ–সংক্রান্ত মামলার আদেশ পেলে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।