ভোট দিলে বিএনপিকে দিবেন, না দিলে ঘরে শুয়ে থাকবেন: বিএনপি নেতার হুমকি
‘আপনারা ভোট দিলে বিএনপিকে দিবেন, না দিলে ঘরে শুয়ে থাকবেন। কিন্তু আপনারা আমাদের চোখের সামনে দিয়ে ওই জামায়াত-রাজাকারকে ভোট দেবেন আর আপনারা বাড়িতে শান্তিতে থাকবেন, ওই শান্তিতে কিন্তু আমি থাকতে দিব না।’
গত শনিবার উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এক নির্বাচনী সভায় বক্তব্যের সময় এ কথা বলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান ওরফে সাগর। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নড়িয়া উপজেলা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর–২ আসনে প্রাথমিকভাবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে একটি নির্বাচনী সভা করেন বিএনপি নেতা মতিউর রহমান। সভার বক্তব্য নিজের ফেসবুকে লাইভ (সরাসরি সম্প্রচার) করেন।
ভিডিওতে মতিউর রহমানকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আওয়ামী লীগকে বলি আপনারা ভোট দিলে বিএনপিকে দিবেন, না দিলে আপনারা ঘরে শুয়ে থাকেন। এ হাউস থেকে কঠোরভাবে উচ্চারণ করে দিই, আওয়ামী লীগের যেসব ভাইয়েরা এলাকায় আছেন, দূরে আছেন। বিগত দিনে আকাম-কুকাম করেছেন, বিভিন্ন অরাজকতা করেছেন, আপনাদের আমরা মাফ করে দেব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাই না।’
মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘আপনারা এলাকায় থাকবেন, আপনারা চিন্তা করে দেখেন, আগামীতে বিএনপির সরকার ক্ষমতায় আসতেছে। এলাকার স্বার্থে, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে, আপনাদের সুবিধা-অসুবিধার জন্য হলেও আপনারা বিএনপির পাশে থাকবেন। যদি আপনাদের দল কখনো পুনর্বাসন হয়, আপনাদের দল যদি কখনো প্রতিষ্ঠিত হয়, আপনাদের দল যদি আবার এ দেশে রাজনীতির সুযোগ পায়, তখন যদি আপনারা আমাদের ছেড়ে চলে যান আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। কিন্তু আপনারা আমাদের চোখের সামনে দিয়ে ওই জামায়াত-রাজাকারকে ভোট দিবেন আর আপনারা বাড়িতে শান্তিতে থাকবেন, ওই শান্তিতে কিন্তু আমি থাকতে দিব না।’
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে সমালোচনা শুরু করেন। পরে ভিডিওটি নিজের ফেসবুক থেকে মুছে দেন মতিউর রহমান। তবে অনেকে আগেই ভিডিওটি ডাউনলোড করে আবার ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এ বিষয়ে মতিউর রহমানকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে গতকাল রোববার বিকেলে এক ফেসবুক লাইভে মতিউর রহমান দাবি করেন, ‘একটি দুষ্টচক্র এআইয়ের মাধ্যমে আমার বক্তব্য বিকৃত করে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি দেশবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীদের জানাতে চাই, ওই বক্তব্য আমার নয়। ওই বক্তব্য শুনে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।’
নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মতিউর রহমানের বক্তব্যটি শুনেছি। তিনি কেন এমন বক্তব্য দিয়েছেন তা জানি না। ওটা আমাদের দলের বক্তব্য নয়। তিনি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। প্রয়োজনে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যোগাযোগ করলে উপজেলা জামায়াতের আমির কাজী আবুল বাশার বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে অনেকেই গায়ে পড়ে ঝগড়া করার চেষ্টা করেন। আমরা সহসা কোনো প্রতিবাদ করি না। আমরা ধৈর্যধারণ করে রাজনীতি করি। আল্লাহর কাছে বিচার দিই। ওদের বিচার আল্লাহ ও জনগণ করবে।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর–২ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাইয়ুম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতিপালন করতে হবে। আমি ভিডিওটি দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’