কাঁটাতারের বেড়া ভাষা ও সংস্কৃতিকে আটকে রাখতে পারে না

ভারতের কলকাতা থেকে আগত অতিথিদের সঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। সোমবার বিকেলে নগর ভবন এ্যানেক্স হল রুমে
ছবি: প্রথম আলো

‘কাঁটাতারের বেড়া ভাষা ও সংস্কৃতিকে আটকে রাখতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্‌দীনকে ভাগ করা যায় না।’

ভারতের কলকাতা থেকে রাজশাহীতে প্রীতি সম্মিলনী অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা এসব কথা বলেন। আজ সোমবার বিকেলে নগর ভবন অ্যানেক্স হলরুম সভাকক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়। এতে রাজশাহীর বিশিষ্টজনেরাও উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আগত ভারতীয় অতিথিদের হাতে উত্তরীয়, ক্রেস্ট, আমের মোমেন্টসহ অন্যান্য উপহার তুলে দেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এর আগে অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক দেবজ্যোতি চন্দ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সান্ত্বন চট্টোপাধ্যায়, বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের আহ্বায়ক সৌম্যব্রত দাস, কলকাতা বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সদস্য বিদ্যুৎ মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম শরিফ উদ্দিন।

খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত যেভাবে সহযোগিতা করেছে, তা ভোলার নয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে বাড়ছে। উভয় দেশের সম্পর্ক বজায় আছে, আগামীতেও থাকবে।’

ভারতের মুর্শিবাদের ধূলিয়ান হতে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত নৌবন্দর চালুর ব্যাপারে আলোচনা চলছে উল্লেখ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে। এটি চালু হলে উভয় দেশ থেকে মালামাল আমদানি-রপ্তানি করা সহজ হবে। উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। বাংলাদেশ-ভারত সুন্দরভাবে এগিয়ে যাবে।

কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর বলেন, ‘দুই দেশের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে সম্পর্ক ও পারস্পরিক ভাবের আদান-প্রদান যত বাড়বে, তখন আমরা বুঝতে পারব দুই দেশের সম্পর্ক উন্নীত হচ্ছে। উভয় দেশের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক যাতে বজায় থাকে—এ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে উভয় দেশ সচেষ্ট বলে মনে করেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবজ্যোতি চন্দ। তিনি বলেন, এর একটি বড় প্রমাণ হিসেবে ১৮ মার্চ মৈত্রী তেল পাইপলাইনের উদ্বোধন হলো। আরও বিভিন্ন বিষয়ে কাজ চলছে। রাজশাহীর সঙ্গে পশ্চিমঙ্গের যোগাযোগ সুন্দর হলে উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সান্ত্বন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, লালন করেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শহীদদের স্মরণ করেন, তাঁদের প্রতি ঋণ স্বীকার করেন, এসব মনে করিয়ে দেয় যে জাতির প্রতি আমাদেরও কর্তব্য রয়েছে।’

বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের আহ্বায়ক সৌম্যব্রত দাস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে আমরা পরস্পরকে জানি ও চিনি। দেশ আলাদা হতে পারে কিন্তু ভাষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন হতে পারে না।’ অনুষ্ঠানে ভারতের অতিথিরা রাজশাহী নগরীর পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের প্রশংসা করেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল খালেক, কবিকুঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান প্রমুখ।