সংসারের অভাব দূর করতে তাঁরা ইতালি যাচ্ছিলেন

ট্রলারডুবির পর থেকে চার তরুণের খোঁজ না পাওয়ায় উৎকণ্ঠায় পরিবারের সদস্যরা। গতকাল বিকেলে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেরার কৃষ্ণনগর গ্রামে
ছবি: আলীমুজ্জামান

দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে লিবিয়া থেকে নৌপথে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন ফরিদপুরের নগরকান্দার ডাঙ্গী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের চার তরুণ। গতকাল বুধবার পর্যন্ত তাঁদের কোনো সন্ধান পাননি ওই পরিবারের সদস্যরা। এ নিয়ে ওই পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তায়।

সংসারের অভাব দূর করতে সুদে টাকা নিয়ে, ধার দেনা করে ও জমি বন্ধক রেখে ওই চারজনকে বিদেশে পাঠিয়েছিল তাঁদের পরিবার। আশা ছিল, ছেলে ভালো চাকরি করে টাকা পাঠাবে। টাকা দিয়ে বন্ধকের জমি ছাড়িয়ে আনবে। পাশাপাশি সুদে নেওয়া, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কিস্তির টাকা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে নেওয়া টাকা শোধ করবে। কিন্তু যাঁদের নিয়ে স্বপ্ন দেখবে, তাঁরাই আজ নিখোঁজ। ফলে এসব পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার।

ভূমধ্যসাগরের ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের ওই চার তরুণের মধ্যে একজন সোবাহান মোল্লার ছেলে মাহফুজ মোল্লা (২২)। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহফুজ বড়। সোবাহান মোল্লা কৃষক। মাহফুজ অনার্স শ্রেণিতে পড়ত ভাঙ্গা কে এম কলেজে।

মাহফুজের ছোট ভাই তানভীর মোল্লা বলে, ‘ভাগ্যের চাকা ঘুরাইতে ভাইকে বিদেশে পাঠাইলাম। কিন্তু সেই চাকা এইভাবে যে ঘুইরা যাবে তা স্বপ্নেও ভাবি নাই। ভাইকে বিদেশে পাঠাতে দালালকে দিতে হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কিস্তির ভিত্তিতে টাকা উঠিয়ে ভাইকে পাঠানো হয়।’

নিখোঁজ আল আমিন মাতুব্বর পরিবারের বড় সন্তান। দুই ভাই–বোনের মধ্যে আল আমিন বড়। আল আমিনের মা চামেলী বেগম বলেন, ‘ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন দালালকে। সব টাকাই ধার–কর্জ করে সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে জমি বন্ধক দিয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার, সমিতি থেকে কিস্তিতে ১ লাখ ২০ হাজার, এ ছাড়া দুই আত্মীয়ের কাছ থেকে আরও ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আনা হয়। অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতা দেখতে পাব, এই আশায় ধার–কর্জ করে ওকে দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার সব স্বপ্ন সাগরে ডাইবা গেল।’

চামেলী বেগম বলেন, কত স্বপ্ন দেখেছিলাম। চার–পাঁচ বছর পর ছেলে ফিরে এলে ওর বিয়ে দেব। টুকটুকে বউ আনব। কিন্তু কিছুই আর থাকল না।

নিখোঁজ অন্য দুই তরুণ হলেন এসকেন মোল্লার ছেলে নাজমুল মোল্লা (২৩) ও সেকেন ব্যাপারীর ছেলে আকরামুল ব্যাপারি (২৭)।

প্রসঙ্গত, ডুবে যাওয়া ওই ট্রলারে মোট ৪৭ যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে নগরকান্দার ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিল গোবিন্দপুর গ্রামের নান্নু সররদারের ছেলে হৃদয় সরদার (২৫) ও আহমেদ ফরাজীর ছেলে রাসেল ফরাজি (২০) রয়েছেন।

গত ৫ জানুয়ারি ওই সব তরুণ ইতালি যাওয়ার জন্য ঢাকায় যান। ঢাকা থেকে ৮ জানুয়ারি দুবাইয়ে যান। দুবাইয়ে চার দিন থাকার পর মিসর হয়ে ১২ জানুয়ারি তাঁরা লিবিয়ায় পৌঁছান। এরপর সোমবার ভোর চারটার দিকে মুরাদ সবাইকে ট্রলারডুবিতে ওই চারজনের নিখোঁজের বিষয়টি জানান।

নগরকান্দা থানার ওসি মিরাজ হোসেন বলেন, এ নিখোঁজের বিষয়ে গতকাল বুধবার পর্যন্ত কেউ আমাদের কিছু জানাননি।