পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে টোল আদায় শুরু

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর বুথে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে টোল পরিশোধ করে সেতুতে উঠছে সেতু কর্তৃপক্ষের গাড়ি। আজ বুধবার সকালে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতুতে এবার পরীক্ষামূলকভাবে ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) কার্যক্রম চালু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় তৈরি স্মার্ট বুথে এ কার্যক্রম শুরু করেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন।

পদ্মা সেতুসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে সেতু দেখভালের দায়িত্বে থাকা কোরিয়ান কোম্পানি কেইসির গাড়িগুলো এ পদ্ধতিতে টোল পরিশোধ করে সেতু পারাপার হবে। সফলতা পেলে আগামী তিন মাসের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ পদ্ধতিতে সেতুর দুই প্রান্তে একটি করে লেনে ইটিসি বুথ থাকবে। আর গাড়িতে থাকবে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) কার্ড। ওই কার্ডের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল আদায় হবে। প্রয়োজন হবে না ক্যাশ লেনদেন, থামতে হবে না টোল প্লাজায়। নিবন্ধন করা যেকোনো যানবাহন টোল প্লাজার সামনে এলে ক্যামেরার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় টোল আদায় হবে। তিন-চার সেকেন্ডের মধ্যে টোল প্রদান শেষে গাড়ি সেতুতে উঠে যাবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী আজ প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১২টার পর থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল আদায় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালু করেছেন। এই পদ্ধতিতে আপাতত সেতু দেখভালের দায়িত্বে থাকা কোরিয়ান কোম্পানি কেইসির গাড়িগুলো পারাপার হবে। এই পদ্ধতি সফল হলে আগামী তিন মাসের মধ্যে সব যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে এখন থেকে টোল আদায় আরও দ্রুত ও সহজ হবে।

আমিরুল হায়দার চৌধুরী আরও বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে টোল আদায়ে কার্ড এবং রেজিস্ট্রেশনের জন্য মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উত্তর থানার কাছে কাউন্টার চালু করা হয়েছে। কার্ড ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান একপের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা এ পদ্ধতির সুবিধা সহজে পেতে মোবাইল ফোনে কীভাবে নিবন্ধন করা যায়, সেটি নিয়েও কাজ করছি। এ ছাড়াও কোন ব্যাংক পদ্ধতিতে টোল আদায় হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।’

আমিরুল হায়দার চৌধুরী বলেন, যানবাহনের সামনে ড্যাশবোর্ড থাকবে। আরএফআইডি নম্বর সংযুক্ত হবে ব্যাংক হিসাবে। এই আইডিতে অগ্রিম টাকাও রিচার্জ করা থাকবে। গাড়ি আসামাত্র তার ধরন অনুযায়ী অ্যাকাউন্ট থেকে টোলের টাকা কেটে নিবে।

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল দিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠছে।আজ বুধবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া টোলপ্লাজা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

তিনি আরও বলেন, টোল আদায় প্রক্রিয়াকে আধুনিক করার লক্ষ্যে মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর বুথে শুধু ইটিসি এবং ২ নম্বর বুথে ইটিসি, টাচ অ্যান্ড গো এবং রসিদের মাধ্যমে নগদ টাকায় টোল পরিশোধ করা যাবে। আর ৩ থেকে ৭ নম্বর বুথে টাচ অ্যান্ড গো এবং ক্যাশ পদ্ধতিতে টোল আদায় চলবে। মোটরসাইকেলসহ সব যানবাহন এ পদ্ধতিতে মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তে টোল পরিশোধ করবে। যাঁদের ইটিসি এবং টাচ অ্যান্ড গো পদ্ধতির রেজিস্ট্রেশন থাকবে না, তাঁরাও খুব সহজে নগদ টাকায় টোল দিতে পারবেন। টোল গ্রহণের ক্ষেত্রে এখন থেকে টোলবুথের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের, কোনো গাড়ির জন্য কত টাকা দিতে হবে, সেটা আর চাইতে হচ্ছে না। গাড়ি টোলপ্লাজায় আসার পর টোল প্লাজার স্বয়ংক্রিয় নম্বার প্লেট গাড়ির টোল নির্ধারণ করছে। কম্পিউটারের মনিটরে টোলের পরিমাণ দেখাচ্ছে। টোল আদায়কারীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে টোল আদায় করে নিতে পারছেন।

আজ পদ্মা সেতুর ৬ নম্বর টোলবুথের দায়িত্বে থাকা মো. নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক দিন আগেও কোনো গাড়ির জন্য কত টাকা টোল আদায় করতে হবে, সেটি আমাদের নিজেদের যাচাই করতে হতো। এখন আর এটা করতে হচ্ছে না। যানবাহনগুলো আসামাত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে এগুলো স্ক্যানিং হয়ে যাচ্ছে। সেখানে যানবাহনের জন্য কত টাকা টোল দিতে হবে, সেটি কম্পিউটারের মনিটরে চলে আসছে। টোল আদায় করার মাধ্যমে যানবাহনগুলো ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই সেতুর দিকে চলে যেতে পারছে।