ব্যবসায়ী নিখোঁজ, ‘অনেক টাকা পাব, টাকা নিয়ে আসেন’ বলে ফোন পান স্ত্রী

আশীষ সাহা
ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাট শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে আশীষ সাহা (৪৩) নামের এক ব্যবসায়ী নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবারের দাবি, গভীর রাতে আশীষের নম্বর থেকে ফোন আসে তাঁর স্ত্রীর কাছে। কিন্তু কথা বলেন অন্য কেউ। এ সময় ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ‘অনেক টাকা পাব, টাকা নিয়ে আসেন’ বলে বাগেরহাটের দড়াটানা সেতুতে যেতে বলা হয়।

আশীষ সাহা বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার নাটইখালী গ্রামের খিরোদ সাহার ছেলে। বাগেরহাট শহরে তাঁর ডিলারশিপের ব্যবসা আছে। এর আগে ইলেকট্রনিকসের ব্যবসা ছিল আশীষের।

সোমবার রাতে শহরের রেল রোড এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে আশীষ নিখোঁজ হন বলে জানিয়েছেন তাঁর ভগ্নিপতি শঙ্কর কুমার সাহা। ঘটনার পর সোমবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে বাগেরহাটের দড়াটানা সেতু থেকে আশীষের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও একটি হাতুড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার রাত ১২টার দিকে ফোনে তাঁর স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয় জানিয়ে আশীষ সাহার স্ত্রী ইশিতা সাহা মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফোন দিয়া আমাকে বলছে যে “বাড়ি আসতিছি। তুমি ভাত রাইখো, ভাত না খাইলে খাইয়ে শোও; আমার একটু দেরি হবে।” এরপর আর ফোন দেয় নাই। রাইত ১টা ১০–এর দিক দিয়া তার নম্বর দিয়া একটা ফোন আসে। আমি ঘুম ছিলাম। তখন ধরতে একটু দেরি হইছে। ফোন ধরলে বলে, “কে, আপনি আশীষের স্ত্রী?” হ্যাঁ বলাতে বলে, “তার কাছে টাকা পাব।” আমি তখন বলি, কয় টাকা পাবেন, তার কাছে দেন। তখন বলে, “না, তার কাছে দেওয়া যাবে না, আপনি টাকা নিয়ে ব্রিজের ওপরে আসেন।” আমি তখন প্রশ্ন করি, এই রাত্রে আমি যাব কী করে, আপনি তার কাছে দেন আমি তার সাথে কথা বলি। তখন বলে, “তারে আর তাইলে পাইলেন না।” এই বইলে কাইটে দেয়।’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

ইশিতা সাহা আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর কোনো শত্রু নেই। সে খুব ভালো ছিল। কোনো দিন কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলা হইছে শুনিনি। বাগেরহাটে সে ব্যবসা করত। কিন্তু কী হয়ে গেল লোকটার। সে তো আর বাসায় আসল না।’

নিখোঁজ আশীষ সাহার ভগ্নিপতি শঙ্কর কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে ওই ফোন পাওয়ার পর থেকেই সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। আমরা খোঁজাখুঁজি শুরু করি। সকালে থানায় যাই। এর আগে রাতেই আমার শ্যালকের মোটরসাইকেল, ফোন, মানিব্যাগ এবং একটি হাতুড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। কোনো দুর্ঘটনায় রাস্তায় গাড়ি পড়ে ছিল ভেবে পুলিশ হাসপাতালেও খোঁজ নেয় রাতে। তবে আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশকে সবকিছু জানিয়েছি। থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। তার কোনো শত্রু আছে এমন জানি না, কিছু টাকাপয়সার দেনা আছে। আগে ইলেকট্রনিকসের ব্যবসা করত, লস করে বেশ কিছু টাকা দেনা হইছে। এখন ডিলারশিপের ব্যবসা করে। এনজিও-সংস্থারও লোন আছে শুনছি।’

জানতে চাইলে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রিজের ওপর একটি মোটরসাইকেল পড়ে আছে খবর পেয়ে রাতে আমরা গিয়ে সেটি উদ্ধার করি। প্রথমে দুর্ঘটনা হিসেবে মনে হয়। তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে আশীষ নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এসে জানানো হয়। তাঁরা মোটরসাইকেলটি ওই ব্যক্তির বলে শনাক্ত করেন। আমরা তদন্ত করে দেখছি, বিষয়টি আসলে কী। ওই ব্যক্তির কাছে অনেকেই টাকাপয়সা পাবেন। তাঁর স্ত্রী নিখোঁজ দাবি করছেন। প্রকৃত ঘটনা কী, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এর আগে ১৭ জুন বাগেরহাটে দড়াটানা সেতুর পূর্ব পাশে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। ওই ঘটনার ১০ দিনেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সোহেল হাওলাদার ওরফে কালা সোহেলসহ মামলার অধিকাংশ আসামি গ্রেপ্তার হননি।