বরিশালে ফরচুন সুজের কারখানায় শ্রমিকদের হামলা-ভাঙচুর, আহত ১০

বরিশালে ফরচুন সুজের কারখানায় বকেয়া বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা আনসার ও পুলিশের সঙ্গে সংঘাত হয়।বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের কাউনিয়া এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতেছবি: প্রথম আলো

বকেয়া বেতন-ভাতা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বরিশালে জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফরচুন সুজ লিমিটেড কোম্পানির কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর করেছেন শ্রমিকেরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ঘটনার সূত্রপাত, চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ সময় কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা শ্রমিকদের লাঠিপেটা করলে অন্তত চার শ্রমিক আহত হন।

তবে শ্রমিকেরা দাবি করেছেন, আনসার সদস্যরা তাঁদের ওপর গুলি চালিয়েছেন। আহত শ্রমিকেরা হলেন মো. আরাফাত (১৮), তামিম (২০), রাফসান (২২) ও মেহেদী হাসান (২২)। তাঁদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার সময় শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান, চারজন আনসার সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

নগরের কাউনিয়া এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত ফরচুন সুজ কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটে। কারখানাটির মালিক বিপিএলের ফরচুন বরিশাল দলের মালিক ও বিসিক শিল্পনগরী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান। শ্রমিকদের ওপর লাঠিপেটা ও ‘গুলিবর্ষণের’ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখা। সংগঠনটির নেতারা দ্রুত শ্রমিকদের বেতন–ভাতা দেওয়ার জন্য পরিষদের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা জানান, ফরচুন সুজ কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসের ৮ তারিখের মধ্যে বেতন–ভাতা দেওয়ার কথা দিয়েছিল। কিন্তু তা না করে কর্তৃপক্ষ এক মাসের বেতন পরের মাসের ২৫ তারিখেরও পরে দিচ্ছে। এ জন্য দুই মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। আজ সেই বকেয়া বেতন চাইতে গেলে কর্তৃপক্ষ মাত্র ১৫ দিনের বেতন দিতে রাজি হয়। তখন কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। শ্রমিকদের অভিযোগ, ওই শ্রমিকদের আনসার ক্যাম্পে ধরে এনে মারধর করা হয়। এতে চার-পাঁচজন শ্রমিক আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বেতন–ভাতার দাবিতে শ্রমিকেরা মিছিল করলে আনসার সদস্যরা লাঠিপেটা করেন। তখন শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানার গ্লাস ও সেখানে থাকা কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। তখন শ্রমিকেরা ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে এক পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আনসার সদস্য আহত হন। আধা ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। বর্তমানে ফরচুন সুজের তিনটি কারখানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আন্দোলনকারী শ্রমিক নাসরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেতন চেয়েছি। বেতন দেবে না ভালো কথা, কিন্তু আমার শ্রমিক ভাইদের মারবে কেন? এই খবর শুনে আমরা সবাই জড়ো হয়ে মিছিল করছিলাম। অতি উৎসাহী কেউ কারখানায় ইট মেরে জানালার গ্লাস ভেঙেছে।’

ঘটনার পর বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম ও মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ বৈঠকে বসে। রাত পৌনে আটটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় বৈঠক চলছিল। নগরের কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সন্ধ্যায় বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন পর্যন্ত চারজন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

‘গুলিবর্ষণের’ নিন্দা, শনিবার বিক্ষোভের ঘোষণা

বেতন–ভাতার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর ‘গুলিবর্ষণের’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাসদের জেলা শাখার নেতারা। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামী শনিবার বেলা ১১টায় নগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে সংগঠনটি। বাসদের জেলা শাখার সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল মল্লিক এক যৌথ বিবৃতিতে দ্রুত শ্রমিকদের বকেয়া বেতন–ভাতা পরিশোধের দাবি জানানো হয়।