সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে অনিয়ম, কাজ বন্ধ 

এক সপ্তাহ আগে বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় নির্মাণকাজ বুধবার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের কলাম নির্মাণের জন্য গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছেছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই অভিযোগ পেয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ গত বুধবার উপজেলা প্রকৌশলী বন্ধ করে দিয়েছেন।

ওই বিদ্যালয়ের নাম হাবাসপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি ১৯৮০ সালে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রথমে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে একতলা ভবনটি দ্বিতল করা হয়। বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষক ও ১১৫ জন শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে মোট জমির পরিমাণ ৩৯ শতাংশ। সপ্তাহখানেক আগে বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পাংশা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়ের চারপাশে পাকা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স ওদুদ মন্ডল। এর মালিক পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ। কাজের প্রাক্কলন মূল্য ১২ লাখ ৯৫ হাজার ২২৩ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।

এলজিইডি ও উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে সীমানাপ্রাচীরের কলামের ভিত্তির ঢালাইয়ের (বেইজ ঢালাই) কাজ শুরু করা হয়। ভিত্তি ঢালাইয়ের রড ব্যবহার করার কথা। পরে ভিত্তি ঢালাইয়ের রডের সঙ্গে কলমের  সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর বালু, সিমেন্ট, খোয়া পরিমাণ মতো দিয়ে ঢালাই করতে হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো রড ব্যবহার করেনি। ঠিকাদার খুব প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় কেউ সরাসরি প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। বিষয়টি জানার পর সেখানে উপস্থিত হয় উপজেলা প্রকৌশলী নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের পাশে হাবাসপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে উত্তরমুখী একটি দ্বিতল ভবন। ভবনে পতাকা উড়ছে। বিদ্যালয়ের ভেতরে একজন সহকারী শিক্ষক কাজ করছেন। বিদ্যালয়ের চারপাশে মোট ৪৩টি গর্ত খোঁড়া হয়েছে। গর্তের ভেতর ইট, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। ছবি তোলা দেখে সহকারী শিক্ষক ও ঠিকাদারের প্রতিনিধি নাজমুল এগিয়ে আসেন। 

সহকারী শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে আমাদের বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের কাজ শুরু করা হয়। বুধবার সকালে বেইজ ঢালাই দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু সময় পরে এলজিইডি থেকে অফিসাররা স্কুলে আসেন। এরপর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, কাজের ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম হয়েছিল। বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। এর পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টির প্রমাণ পাওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। নির্মাণকাজে অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ফরিদ হাসান ওদুদ বলেন, ‘আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়ে যুবলীগের নাজমুল নামে এক কর্মী কাজ করছে। সে ছোট মানুষ। বিষয়টি বুঝতে পারে নাই। এ কারণে কিছু অনিয়ম করেছে। অনিয়ম করায় কাজ আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ’