পানিসংকটের প্রতিবাদে আবাসিক হলের ছাদে বৃষ্টির পানি জমিয়ে প্রতিবাদ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে পানির সংকট নিরসনের প্রতিবাদে বালতিতে বৃষ্টির পানি জমিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আজ বিকেলে
ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে পানিসংকট সমস্যার সমাধান না হওয়ায় প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে বঙ্গবন্ধু হলের ছাদে জড়ো হয়ে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় ওই শিক্ষার্থীরা হলটির ছাদে বালতিতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা স্লোগানও দেন তাঁরা।

হল প্রাধ্যক্ষ আরিফ হোসেন বলছেন, ‘পানির সমস্যা আছে, এটা ঠিক। সেটা গাফিলতি নয়। তবে কতিপয় শিক্ষার্থী অবৈধভাবে হলে থাকতে চায়। কিন্তু আমি তাদের প্রশ্রয় দিই না বলেই পানির সমস্যাকে সামনে এনে আমার পদত্যাগ দাবির রাজনীতি করা হচ্ছে।’

শিক্ষার্থীরা জানান, বঙ্গবন্ধু হলে দীর্ঘদিন ধরে পানিসংকট নিরসন না হওয়ার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এর মধ্যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র নেই বলেও দাবি তাঁদের।

শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, হলের পানিসংকট দীর্ঘদিন ধরে হলেও তা নিরসনে কোনো উদ্যোগ হল প্রশাসন নেয়নি। প্রাধ্যক্ষের এই ব্যর্থতার জন্য তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হলটিতে দীর্ঘদিন ধরে পানির সংকট চলছে। বারবার হলের প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েও কোনো সমাধান পাননি তাঁরা। সর্বশেষ গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীরা ১৭ দফা দাবিসংবলিত একটি আবেদন দেন। সেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে হলটির পানির সমস্যা দূর করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে শুক্রবার সকাল থেকেই পানি ছিল না হলটিতে। এতে চরম বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। অনেকে গোসল করতে পারেননি। অনেকেই এ জন্য জুমার নামাজে অংশ নিতে পারেননি। একপর্যায়ে হলের বিভিন্ন তলায় বসবাসরত শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। একই সঙ্গে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে হলের ছাদে জড়ো হন এবং বালতি নিয়ে তাতে বৃষ্টির পানি ধরে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন।

পানির সমস্যা আছে, এটা ঠিক। সেটা গাফিলতি নয়। তবে কতিপয় শিক্ষার্থী অবৈধভাবে হলে থাকতে চায়। কিন্তু আমি তাদের প্রশ্রয় দিই না বলেই পানির সমস্যাকে সামনে এনে আমার পদত্যাগ দাবির রাজনীতি করা হচ্ছে।
আরিফ হোসেন, প্রাধ্যক্ষ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল

শিক্ষার্থীরা জানান, পানিসংকট নিরসনের জন্য বঙ্গবন্ধু হলের উত্তর পাশে শেরেবাংলা হলসংলগ্ন পুকুর সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কয়েকবার পুকুরটির সংস্কারের কথা বলা হলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ২০২১ সালের মার্চে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগে পুকুরটি সংস্কার চেয়ে চিঠি পাঠান ওই সময়ের বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ রাহাত হুসাইন ফয়সাল। পরে চলতি বছর ৫ জুন ও ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পুকুরটি সংস্কার চেয়ে আবেদন পাঠান বঙ্গবন্ধু হলের বর্তমান প্রাধ্যক্ষ মো. আরিফ হোসেন। কিন্তু আজও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি পুকুর সংস্কারের বিষয়ে।

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোসাহিদ আনসারী বলেন,‘ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে পানির সমস্যা রয়েছে। গোসলের সময়সহ প্রায়ই পানি পাওয়া যায় না। শুক্রবার সকাল থেকেই পানি পাওয়া যায়নি। তাই আমরা গোসল করতে ও নামাজে যেতে পারিনি। পানির সমস্যা এখন নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা এই কর্মসূচি পালন করেছি।’

হলের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, ‘দুই মাসের বেশি সময় ধরে হলে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা এই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। শুক্রবার সকাল থেকে পানি না থাকায় কয়েক শ শিক্ষার্থী দুর্ভোগে পড়েন। ফলে বাধ্য হয়ে এ ধরনের প্রতিবাদ করতে হয়েছে। আমরা হলে দ্রুত পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ চাই।’

শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, হলের পানিসংকট দীর্ঘদিন ধরে হলেও তা নিরসনে কোনো উদ্যোগ হল প্রশাসন নেয়নি। প্রাধ্যক্ষের এই ব্যর্থতার জন্য তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হলের পানিব্যবস্থাপনা অবকাঠামোর ত্রুটির কারণে পানিসংকট হচ্ছে। কারণ, এখানে আরসিসি ট্যাংক নেই। প্লাস্টিকের অস্থায়ী ট্যাংকে দুটি মোটর দিয়ে পানি তোলায় পানির সংকট দেখা দেয়। সংকট আছে, সেটা ঠিক; কিন্তু এর মূলে অবকাঠামোগত সমস্যা এবং ২৫০ আসনের হলে ৫০০ শিক্ষার্থী বসবাসের কারণে এটা প্রকট হয়েছে। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এই সমস্যা বেশি হয়।