এক কেন্দ্রে যেভাবে শতভাগ ভোট

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের মমতাজুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রছবি: সংগৃহীত

কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার ৩ হাজার ৯৮০ জন। গত রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, কেন্দ্রের সব ভোটারই ভোট দিয়েছেন। শতভাগ ভোট পড়া কেন্দ্রটি চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের। উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের ৩৬ নম্বর মমতাজুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এমনটা হয়েছে।

মমতাজুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে নারী ভোটার ১ হাজার ৮৯৩ ও পুরুষ ভোটার ২ হাজার ৮৭ জন। নির্বাচন কমিশনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই কেন্দ্রটিতে ৩ হাজার ৯৮০ ভোটই পড়েছে। অবশ্য তার মধ্যে বাতিল ভোট দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৩৫৭টি। বৈধ ভোট ১ হাজার ৬২৩টি। সাধারণত জাল ভোট, সিল না পড়া বা সই না থাকার কারণে ভোট বাতিল করা হয় বলে নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়।

সন্দ্বীপে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ৮৪টি। একমাত্র এই কেন্দ্রে শতভাগ ভোট। আট প্রার্থী থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের জামাল উদ্দিন চৌধুরীর। বিজয়ী হয়েছেন মাহফুজুর রহমান। দুই প্রার্থী প্রায় কাছাকাছি ভোট পান মমতাজুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রে। নৌকা পায় ৭৩৮ এবং ঈগল পায় ৭৯৩ ভোট। অন্যান্য প্রতীকের মধ্যে মশাল ১৬টি, মোমবাতি ৩৩টি, একতারা ১টি ও চেয়ার ৪২টি ভোট পায়। লাঙ্গল ও আম প্রতীক শূন্য ভোট।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলেন, ‘কীভাবে শতভাগ ভোট পড়ল, তা আমার জানা নেই। আপনি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।’

এখানকার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন পূবালী ব্যাংক আকবরহাট উপশাখার ব্যবস্থাপক গাজী আমিরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রে ভোট বাতিল হয়েছে ২৪টি। কিন্তু অব্যবহৃত ব্যালটগুলো আমি বাতিল ব্যালট হিসেবে দেখিয়ে দিয়েছি। যার জন্য শতভাগ ভোট পড়েছে দেখানো হয়।’

এভাবে অব্যবহৃত ভোট বাতিলের খাতায় দেখানো যায় কি না এমন প্রশ্নে আমিরুল বলেন, ‘বিষয়টা আমার ভুল হয়েছে। আমি না জেনে করেছি।’

কিন্তু প্রিসাইডিং কর্মকর্তার এই কাণ্ডের পরও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় কিংবা নির্বাচন কর্মকর্তারা বিষয়টি আর সংশোধন করেননি। এ বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দেবাশীষ দাশ বলেন, অব্যবহৃত ব্যালট বাতিলে দেখানোর সুযোগ নেই। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এটা করেছেন। ওভাবেই ফলাফল পাঠিয়ে দেওয়া হয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। ফলাফল শিটে কেন্দ্রের সবার সই ছিল।

চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ২ হাজার ২৩টি। কোনো কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েনি। একমাত্র সন্দ্বীপের মমতাজুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রটি ব্যতিক্রম। এই কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক সাইফুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট হয়েছে। কোনো রকম গন্ডগোল হয়নি। সব প্রার্থীর এজেন্ট শেষ পর্যন্ত ছিলেন। কিন্তু এত ভোট কীভাবে বাতিল হলো, তা আমার জানা নেই।’

ঈগল প্রতীকের কেন্দ্র এজেন্ট সাইফুল ইসলামও ভোট গণনার শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ছিলেন। এত ভোট কেন বাতিল হলো জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, কোনো ঝামেলা হয়নি। এত ভোট বাতিল হওয়ার কথা নয়। এটা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ভুলে হতে পারে।