নওগাঁয় ভোটের পরও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মারধর, বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ

নওগাঁ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। আজ শুক্রবার সকালে নওগাঁ শহরের একটি রেস্তোরাঁয়ছবি: প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান তাঁর কর্মীদের মারধর, বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এই আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের অনুসারীরা এসব হামলা চালিয়েছেন বলে তাঁর দাবি।

আজ শুক্রবার সকালে নওগাঁ শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামান। নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খালেকুজ্জামান এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। সাধন চন্দ্র মজুমদারের কাছে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারেন তিনি।

খালেকুজ্জামান অভিযোগ করেন, নির্বাচনের পর নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দননগর, হাজিনগর, ভাবিচা ও রসুলপুরে ইউনিয়নের অন্তত ৮০টি গভীর নলকূপে তালা মেরে দিয়েছেন নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা। এত দিন এসব নলকূপ তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা বৈধভাবে পরিচালনা করতেন। চন্দননগর ইউনিয়নে তাঁর সমর্থকদের দুটি পুকুরে নৌকার সমর্থকেরা কীটনাশক প্রয়োগ করে প্রায় ৬০ মণ মাছ ধরেছেন। সেসব মাছ দিয়ে তাঁরা প্রকাশ্যে ভূরিভোজ করেছেন।

আরও পড়ুন

নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকেই নৌকার প্রার্থীর অনুসারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মারধর, তাঁর ট্রাক প্রতীকের নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর ও ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন খালেকুজ্জামান। এসব অন্যায়-অত্যাচারের কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসে বলে তাঁর দাবি।

স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু ভোটের পরদিন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নৌকার সমর্থকেরা এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন। আমার নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতির মধ্যে রেখেছে। ট্রাকে ভোট দেওয়ার কারণে অনেক নেতা-কর্মী এখন বাড়িছাড়া। আমি নিজে এবং ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করার পরেও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক হামলা, মারধর, বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের তালিকা দেন খালেকুজ্জামান। নির্বাচন–পরবর্তী নৈরাজ্য বন্ধে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

খালেকুজ্জামান বলেন, ‘৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু–কন্যা শেখ হাসিনা মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিলে আমি নির্বাচনে আসি। ৭৬ হাজার ১৯৩ ভোট পেয়ে নৌকার প্রার্থী সাধন চন্দ্র মজুমদারের কাছে পরাজিত হই। আমি বিশ্বাস করি, যাঁরা ট্রাক ও নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। আমার সমর্থকদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করার মানে আওয়ামী লীগের ওপর অন্যায়-অত্যাচার।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ধরেননি। খাদ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নিয়ামতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটে হেরে যাওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী খালেকুজ্জামানের মাথা ঠিক নেই। খাদ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ করছেন। আমাদের এলাকা শান্তিপূর্ণ এলাকা। এখানে নির্বাচন ঘিরে অতীতে কখনো সহিংসতা হয়নি। বর্তমানেও হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’