রাজশাহীতে কর্মশালা
কর্তারা অনুষ্ঠানস্থলে, গাড়িতে এসি চলে
উত্তরাঞ্চলে কৃষিবিষয়ক এক কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছিলেন। বাইরে তাঁদের অনেকের গাড়ি স্টার্ট দেওয়া ও এসি চালানো অবস্থায় ছিল।
চারদিকে যখন জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা বলে হচ্ছে, রাজশাহী শহরে তখন উল্টো চিত্র দেখা গেল। গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কৃষিবিষয়ক এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক। যোগ দিয়েছিলেন ২৬টি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। অনুষ্ঠানস্থলে এসেছিল শতাধিক গাড়ি। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মিলনায়তনের ভেতরে অনুষ্ঠান চলে। আর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের বহনকারী গাড়িগুলো স্টার্টে রেখে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র ছেড়ে অন্তত ৩০টি সরকারি গাড়ির চালক গাড়ির ভেতরে এসি ছেড়ে শুয়ে-বসে সময় পার করছিলেন।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গাড়িটির (ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩৩০৩১) ইঞ্জিন চালু রেখে ভেতরে বসে ছিলেন চালক আহাদ। এভাবে বসে থেকে জ্বালানি অপচয় করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে চালক বলেন, বাইরে খুব গরম। তাঁদের বসার জায়গা নেই। তাই গাড়ি চালু রেখে এসি ছেড়ে দিয়ে ভেতরে বসে আছেন।
ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩৭০৪৯ নম্বর গাড়ির চালকের নাম আলম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথাও প্রোগ্রামে গেলে তিনি এভাবেই থাকেন। ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩৩০১৩ নম্বর গাড়িটি আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার। চালক জুয়েল বললেন, ‘আমি এক্ষুনি এলাম। আমরা তিনজন চালক একসঙ্গে বসে গল্প করছি।’
জানতে চাইলে আক্কেলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কখনোই গাড়ির চালকের এটা করা উচিত নয়। এটা তাঁর ধারণার মধ্যেই ছিল না। এখন থেকে তিনি খেয়াল করবেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার গাড়ির চালক মহসীন বললেন, মুঠোফোনের চার্জ দেওয়ার জন্য গাড়ি চালু করেছেন। সঙ্গে এসিও ছেড়েছেন।
ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩৬১৯১ নম্বর গাড়ির চালক গাড়িটি চালুে রেখে এসি ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। শব্দ করেও তাঁকে জাগানো যায়নি।
সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গাড়ির (নম্বর ঢাকা মেট্রো ঠ-১৩৭০৪২) চালক জহুরুল বলেন, গাড়ি গরম হয়ে গেছে। এসি না দিলে কাচ ফেটে যেতে পারে। তাই একটু ঠান্ডা করে নিচ্ছেন। সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান বলেন, তিনি অনুষ্ঠানে ঢুকে গেছেন। সঙ্গে সঙ্গে চালকেরও গাড়ি থেকে বের হয়ে আসার কথা। তারপর চালক কী করেছেন, তা তো অনুষ্ঠানে থেকে তাঁর পক্ষে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তিনিও এখন থেকে বিষয়টি দেখার কথা বলেন।
সিরাজগঞ্জের এক চালক বললেন, ১৬টি জেলার গাড়ি এখানে এসেছে। তাঁর জেলারই ছয়টি গাড়ি এসেছে। ছয়জন কর্মকর্তা ছয়টি গাড়ি না এনে দুটি গাড়ি নিয়েও আসতে পারতেন।
কতগুলো সংস্থার গাড়ি সেখানে রয়েছে জানতে চাইলে অনুষ্ঠানের লিয়াজোঁ অফিসার এম আবদুল মোমিন বলেন, ২৬টি সংস্থার গাড়ি এখানে রয়েছে। এখান সার ডিলারদেরও গাড়ি রয়েছে। তাঁরাও গাড়ি নিয়ে এসেছেন। গাড়ি স্টার্টে রেখে এসি চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে চাননি।
এমন অপচয় সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দায়িত্বহীনতা ওপরের দিকে থাকলে নিচের দিকেও থাকে। আগে ওপর থেকে এটা দূর করতে হবে। তা ছাড়া হবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে জ্বালানি সাশ্রয়ের একটি প্রতিবেদন নেওয়া উচিত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আয়োজিত গতকালের কর্মশালার বিষয়বস্তু ছিল ‘বিদ্যমান শস্যবিন্যাসে তৈল ফসলের অন্তর্ভুক্তি এবং ধান ফসলের অধিক ফলনশীল জাতসমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি’। রাজশাহী, রংপুর বিভাগসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার কৃষি কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে খাদ্যনিরাপত্তা টেকসই করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই মুহূর্তে দেশে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ। অন্যদিকে কৃষিজমি কমছে। এ অবস্থায় এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে কৃষিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করতে হবে, যান্ত্রিক করতে হবে, আধুনিক করতে হবে। উদ্ভাবিত জাত ও প্রযুক্তিকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে। তাহলেই খাদ্যনিরাপত্তা টেকসই করা সম্ভব হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন ব্রির মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজির আলম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, বিএডিসির সদস্য পরিচালক (বীজ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ব্রির পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান প্রমুখ।
কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উত্তরের চার অঞ্চলের (রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া) উপপরিচালকেরা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা, হর্টিকালচার সেন্টার ও উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রগুলোর উপপরিচালকেরা, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির এই চার অঞ্চলের আঞ্চলিক বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তারা, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষরা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের এই অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।