সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলায় এবার প্রথম ভোট, আগ্রহ-উচ্ছ্বাস বেশি
সুনামগঞ্জের নতুন উপজেলা হচ্ছে মধ্যনগর। নবগঠিত এই উপজেলা পরিষদে এবার প্রথম ভোট হচ্ছে। তাই ভোট নিয়ে উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে আগ্রহ-উচ্ছ্বাসও একটু বেশি। কে হচ্ছেন মধ্যনগর উপজেলা পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। হাটবাজারের চায়ের দোকানও ভোটের আলোচনায় সরব।
চারটি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলা। ইউনিয়নগুলো আগে যুক্ত ছিল ধর্মপাশা উপজেলায়। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস–সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় মধ্যনগর থানাকে উপজেলা হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার পর ২০২২ সালের ২৪ জুলাই থেকে নবগঠিত এই উপজেলায় প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। এই উপজেলার আয়তন ২২১ বর্গকিলোমিটার।
মধ্যনগর উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটজন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-সমর্থক ও নির্দলীয় ব্যক্তি আছেন। প্রার্থীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন (দোয়াত–কলম), আওয়ামী লীগের সমর্থক মো. আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়া (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রবীর বিজয় তালুকদার (আনারস), আওয়ামী লীগের সমর্থক সাইদুর রহমান (কাপ–পিরিচ), বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল ইসলাম (হেলিকপ্টার), উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সজল কান্তি সরকার (ঘোড়া), বরুণ কান্তি দাশগুপ্ত (চিংড়ি) ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল (শালিক পাখি)। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে সাতজন ও ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
টাঙ্গুয়ার হাওরপারের এই উপজেলার চামারদানী গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক দেবল চন্দ্র পোদ্দার (৫৫) বলেন, ‘উপজেলা হওয়ার পর এটাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ভোট। তাই প্রার্থী-ভোটার সবার মধ্যে আলাদা একটা উচ্ছ্বাস আছে। আমরা দেখার অপেক্ষায় আছি, কে আমাদের প্রথম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হচ্ছেন।’
মধ্যনগর বাজার ধানচাল আড়ত কল্যাণ সমিতির সভাপতি সমাজকর্মী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। এখানে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে বলে মনে হচ্ছে। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ভালো হওয়ার কথা।’
সাধারণ ভোটারদের ভাষ্য, চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বেশি। ভোটে প্রার্থীদের দলীয় ও ব্যক্তি পরিচয় দুটো প্রাধান্য পাবে। কোনো কোনো প্রার্থী পারিবারিক প্রভাব কাজে লাগানোর চেষ্টাও করছেন। তবে হাওরপারের পিছিয়ে পড়া এই উপজেলাকে সামনে এগিয়ে নিতে কোন প্রার্থী বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন, সেটিও ভোটাররা ভাবছেন।
উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণউড়া গ্রামের বাসিন্দা কলেজশিক্ষার্থী মুজাহিদ মিয়া বলেন, ‘আমি নতুন ভোটার। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম ভোট দিয়েছি। এবার দেব উপজেলায়। উপজেলার সাধারণ জনগণ যাঁর কাছ থেকে সহজে সেবা পাবেন, এমন প্রার্থীকেই ভোট দেব।’
নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও তাঁদের উন্নয়নে যিনি কাজ করবেন, তাঁকেই উপজেলার প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান উপজেলার দুগনই গ্রামের গৃহিণী দীপ্তি আক্তার (২৯)।
উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলেও এখনো অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। নিয়োগ হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল। বিভিন্ন কাজে এখনো পাশের ধর্শপাশা উপজেলায় যেতে হয় জানিয়ে সংস্কৃতিকর্মী আলা উদ্দিন (৪৭) বলেন, উপজেলা নতুন। অনেক কাজ করতে হবে। যাতায়াত, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন দরকার। তাই উপজেলা পরিষদে দক্ষ ও জনবান্ধব জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন।
মধ্যনগর উপজেলায় ভোটার ৭৩ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৭ হাজার ৬৬৫ ও নারী ভোটার ৩৫ হাজার ৪৯৮ জন। এখানে কেন্দ্র আছে ২৭টি। ভোট গ্রহণ করা হবে আগামীকাল বুধবার।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা অতীশ দশী চাকমা বলেন, উপজেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।