বেড়েছে পরিবহন খাতে ব্যবসা

বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাকায় সাতটি কোম্পানির ৩৫০ বাস চলাচল করছে।

পদ্মা সেতুফাইল ছবি

২০০৪ সালে ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন বাসমালিকেরা। এর আগে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হয়ে নিয়মিত শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় বাস চলাচল করত। তবে ফেরি পারাপার মানেই যেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। আবার ঝড়-বৃষ্টিসহ বিভিন্ন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ফেরি চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়। এতে যাত্রী দুর্ভোগসহ নানা সীমাবদ্ধতায় বাসমালিকেরা লোকসানে পড়েন। একপর্যায়ে বাসমালিকেরা বাধ্য হয়ে বাস বন্ধ করে দেন।

তবে এই চিত্র আমূল বদলে গেছে গত ছয় মাসে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর চলতি বছরের ২৬ জুন থেকে ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে ১৮ বছর পর পুনরায় বাস চলাচল শুরু হয়। গত ছয় মাসে শরীয়তপুরের পরিবহন খাতের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে কয়েক গুণ। এতে অন্তত দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই খাতে।

বাসমালিকেরা জানান, শরীয়তপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৭১ কিলোমিটার। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কপথের মধ্যে আছে পদ্মা নদী। এ ছাড়া পদ্মা, মেঘনা ও কীর্তিনাশা নদীর অববাহিকায় এ জেলার অবস্থান। নৌপথে এ জেলার মানুষ ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করেন। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়। ২৬ জুন থেকে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করা শুরু হয়। এরপর থেকেই বদলে যেতে থাকে শরীয়তপুরের পরিবহনখাতের ব্যবসা।

পদ্মা সেতু চালুর পর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, প্রতিনিয়ত এই খাতে কর্মী ও শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে।
ফারুক চৌকিদার, সভাপতি, শরীয়তপুর বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া–জাজিরা নৌপথের লঞ্চ ও ফেরি চলাচল। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন শরীয়তপুরের ২০-২৫ হাজার মানুষ ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করতেন। এখন ওই যাত্রীরা বাসে ও ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করছেন। বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাকায় সাতটি কোম্পানির ৩৫০ বাস চলাচল করছে। গত ছয় মাসে বাস ব্যবসায়ীরা এই খাতে অন্তত ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়া শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে পণ্য পরিবহন করছেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর অনেক ব্যবসায়ী নতুন ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান কিনেছেন। পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে ভাড়ায় চালিত গাড়ির ব্যবসা।

নড়িয়া উপজেলা সদর ও জেলা শহরের পালং বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী পরিমল ঘোষ সম্প্রতি দুটি বাস শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের বাস কোম্পানিতে দিয়েছেন। দুটি বাস থেকে তাঁর প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। বাস পরিচালনা করার জন্য তিনি সাতজন লোক নিয়োগ করেছেন।

পরিমল ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন শরীয়তপুর-ঢাকা যাতায়াতের জন্য মানুষকে বাসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এ খাতে বিনিয়োগ করলে ভাল ব্যবসা হবে এমন ভেবে দুটি বাস নামিয়েছি। ভাল ব্যবসাও হচ্ছে, নতুন মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে।’

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রেন্ট–এ–কারের ব্যবসা শুরু করেছেন শরীয়তপুরের সোহেল খান। তিনি দুটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কার কিনে ব্যবসা শুরু করেছেন। সোহেল বলেন, এই মুহুর্তে শরীয়তপুরে সবচেয়ে জমজমাট ব্যবসা হলো পরিবহন ব্যবসা। গত ৬ মাসে রেন্ট–এ–কার, বাস ও পণ্য পরিবহনের ব্যবসা অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে পদ্মা সেতুুর কারণেই।

পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকার চকবাজার, মকিমকাটারাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মালামাল কিনে ব্যবসায়ীরা ট্রলার ও লঞ্চে করে শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে আসতেন। ব্যবসায়ীরা এখন ওই মালামাল ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে নিয়ে আসছেন।

শরীয়তপুর বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার বলেন, ৯০ দশকে স্থানীয় পর্যায়ে বাস চলাচল শুরু হয়। তবে এই খাতে গত ৩০ বছরে খুব বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। পদ্মা সেতু চালুর পর পরিবহন খাতে ব্যাপক সফলতা এসেছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, প্রতিনিয়ত এই খাতে কর্মী ও শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে।

শরীয়তপুর বাস ও মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু ব্যবসায়ীদের কষ্ট ও দুর্দশা ঘুচিয়ে দিয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত ছয় মাসে এই এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। বিশেষ করে, পরিবহন ব্যবসার ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। বৈধ ও সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবসা চালানোর জন্য প্রশাসন সব সময় পরিবহন ব্যবসায়ীদের পাশেই আছে।