লামায় ম্রোপাড়ায় আবার হামলা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট

বান্দরবানের লামায় সরইয়ের রেংয়েনপাড়ার হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর ম্রোদের একটি ঘর। আজ সোমবার সকালেছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের লামা উপজেলার সরইয়ে গতকাল রোববার রাতে রেংয়েন ম্রোপাড়ায় হামলা চালিয়ে লুটপাট, সাতটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শীতের রাতে হামলার সময় পাড়ার নারী-পুরুষ ও শিশুরা পালিয়ে রক্ষা পেলেও তাঁদের ঘরবাড়ি থেকে কাপড়চোপড়, মালামাল হামলাকারীরা নিয়ে গেছেন।

পাড়াবাসীর অভিযোগ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড কোম্পানি তাঁদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য ট্রাকভর্তি লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এসে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে।
গত বছরের ২৬ এপ্রিল রেংয়েনপাড়া, লাংকমপাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরাপাড়ায় ৩৫০ একর জুমের জমি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে লামা রবার ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে। সেই সময় কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মামলায় কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার এবং ম্রো ও ত্রিপুরাদের পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক আরিফুর রহমান বলেছেন, তাঁরা রেংয়েনপাড়ার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, লুটপাটের ব্যাপারে কিছু্ই জানেন না। কোনো কিছু হলে অথবা নিজেরা কিছু সাজিয়ে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির ওপর দোষ চাপানো ওই এলাকার ম্রো ও ত্রিপুরাদের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
রেংয়েনপাড়ার কার্বারী (পাড়াপ্রধান) রেংয়েন ম্রো জানিয়েছেন, গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে লামার রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ট্রাকভর্তি শতাধিক লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে আসেন। তাঁরা ‘ধরো ধরো, ম্রো ধরো’ বলে চিৎকার করতে করতে ঘরবাড়িতে হামলা করেন। ট্রাকের শব্দ ও হামলাকারীদের চিৎকার শুনে পাড়াবাসী ঘুম থেকে জেগে যে যেভাবে পারে জঙ্গলে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। লাঠিসোঁটাধারী লোকজন পাড়ার ছাগল, হাঁস, মুরগি, কম্বল, সৌরবিদ্যুতের প্যানেলসহ যা পেয়েছেন, সবই লুটে নিয়েছেন। যাওয়ার সময় চারটি বাড়ি ভাঙচুর ও তিনটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন তাঁরা।

লামায় সরইয়ের রেংয়েনপাড়ায় ভাংচুর করা বাঁশের একটি ঘর। আজ সোমবার সকালে
ছবি: সংগৃীত

পাশের লাংকমপাড়ার কার্বারী লাংকম ম্রো আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, রেংয়েনপাড়াবাসীর কয়েকটি পরিবারের বাঁশের ঘর ভেঙে যাওয়ায় নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার কয়েকটি যৌথ পরিবার পৃথক হওয়ায় তাঁরাও বাড়ি করছেন। নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণ দেখে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানির লোকজন কয়েক দিন ধরে মৌখিকভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণে বাধা দিয়ে আসছিলেন।

রেংয়েনপাড়ায় হামলাকারীদের পুড়িয়ে দেওয়া ঘরের মালিক রেংইয়ুং ম্রো ও চিংচ্যং ম্রো জানিয়েছেন, তাঁদের পুরোনো ঘর জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এ জন্য পাড়ার পাশে নতুন ঘর তৈরি করছিলেন। হামলাকারীরা গত রাতে নতুন ঘর পুড়িয়ে দিয়েছেন এবং পুরোনো ঘরও ভাঙচুর করেছেন। এখন অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

পাড়াবাসী জানিয়েছেন, তাঁদের রেংয়েনপাড়ায় ১১টি দরিদ্র ম্রো পরিবার বসবাস করে। জুমচাষ, বাগান ও দিনমজুরি করে কোনরকমে জীবন ধারণ করছেন। তাঁদের রেংয়েনপাড়া, লাংকমপাড়া ও জয়চন্দ্রপাড়া—তিনটি পাড়াবাসী ওই এলাকায় ৪০০ একর জুমের জমিতে জুমচাষ করেন। তাঁদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য কয়েক বছর ধরে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি চেষ্টা করছে। গত বছর ২৬ এপ্রিল জুমের ৩৫০ একর জমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর রেংয়েনপাড়ার পানির উৎসের ঝিরিতে বিষ ঢেলে দেওয়া হয় বলে রেংয়েন কার্বারী অভিযোগ করেন।

লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, রেংয়েনপাড়ার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া ও লুটপাটের বিষয়টি ম্রোরা আজ সকালে তাঁকে জানিয়েছেন। তদন্তের জন্য তিনি ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। অপরাধী যে–ই হোক, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগেও জুমের জমি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন