শান্তিময় পৃথিবীর প্রত্যাশায় কক্সবাজারে শুরু কবিতা মেলা, সাগরে সাম্পান যাত্রা কবিদের

কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কবিতা মেলার প্রথম দিনে দেশ–বিদেশের কবিদের বিশ্ব শান্তি ঘোষণা ও মঙ্গল সংগীত পরিবেশনা। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায়
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শুক্রবার সকালে বিশ্বব্যাপী শান্তির ঘোষণা দিলেন দেশ-বিদেশের শতাধিক কবি। তাঁরা বললেন, সংঘাত-হানাহানির দুনিয়া নয়; একটি শান্তিময় পৃথিবী বিনির্মাণের পথে যাত্রা করতে হবে সবাইকে। কক্সবাজার থেকে সেই যাত্রা শুরু করেছেন তাঁরা।

সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে ‘মানবিক সৌন্দর্যের জন্য কবিতা’ প্রতিপাদ্যে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কবিতা মেলা শুরু হয়েছে। ‘শান্তির পৃথিবী চাই, শুদ্ধাচারী স্বদেশ চাই’ স্লোগানে মেলার উদ্বোধন করেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পৃথিবীব্যাপী নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকেও উদ্বিগ্ন থাকতে হচ্ছে। আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।’

কবিতা মেলা উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজিবুল ইসলামের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক লেখক দিবসের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. সানাউল হক। কবিতার শপথ বাক্য পাঠ করান জাতিসত্তার কবি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। বাংলা একাডেমির সংগীত দলের গানে গানে জানানো হয় শান্তির প্রার্থনা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের সভাপতি শেখ রবিউল হক।

কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কবিতা মেলায় অংশ নেওয়া দেশ–বিদেশের কবিদের নিয়ে সমুদ্রে ‘কবিতার সাম্পান যাত্রা’। জাহাজেই চলে আবৃত্তি, গান ও কথামালা। আজ শুক্রবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

মেলায় ভারত, চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ৪০ জনসহ দেশের বিভিন্ন জেলার দেড় শতাধিক কবি অংশ নিচ্ছেন।

কবিতা মেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে কক্সবাজারে এই আন্তর্জাতিক কবিতা মেলার আয়োজন। বছরের শেষ মুহূর্তে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত দেখার পাশাপাশি কবিদের বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, বৌদ্ধপল্লি, মুক্তা ও শুঁটকি উৎপাদনের সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ পান কবিরা। তাতে বহির্বিশ্বে কক্সবাজারের ইতিহাস–ঐতিহ্যসহ পর্যটনের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটবে।

দেখা গেছে, শহীদ মিনারের কর্মসূচি শেষ করে দেশ–বিদেশের কবিরা পৌঁছান শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিতে। সেখানে আগে থেকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল একটি জাহাজ। জাহাজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কবিতার সাম্পান’। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার নেতৃত্বে দেশ–বিদেশের কবিরা ওঠেন সেই কবিতার সাম্পানে। কবিদের সঙ্গে আছেন সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। তাঁর বাড়িও মহেশখালীতে।

বেলা ১১টার দিকে সাম্পান যাত্রা শুরু হয় বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মহেশখালীর দিকে। সাম্পানে চলে কবিদের স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি ও কবিতা পাঠের আসর। চলে দ্বীপটির ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পান ও সুপারির গুণগান। আলোচনায় আসে চট্টগ্রামের বিখ্যাত আঞ্চলিক গানের শিল্পী শেফালী ঘোষের সেই গান, ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, মহেশখালীর পানের খিলি তাঁরে বানাই খাবাইতাম...।’ বাদ যায়নি একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত মহেশখালীর মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস, স্মৃতিকথাও। প্রায় ৪৫ মিনিট পর সাম্পান ভেড়ে মহেশখালীর গোরকঘাটা আদিনাথ মন্দির জেটিতে। কবিরা পায়ে হেঁটে, কেউ ইজিবাইকে চড়ে পৌঁছান ২৮৮ ফুট উঁচু সেই মৈনাক পর্বতের চূড়ার আদিনাথ মন্দিরে।

দুপুরে মন্দির প্রাঙ্গণে চলে অনুষ্ঠানমালা। এরপর দুপুরের খাবার সেরে কবিরা একই জাহাজে ফেরেন শহরে। বিকেলে শহরের কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ সুভাষ হলে কবিরা অংশ নেবেন কথামালা ও সাংস্কৃতিক উৎসবে।

মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব নুপা আলম বলেন, আগামীকাল শনি ও রোববার দুই দিন চলবে কবিতা পাঠ, শান্তির প্রার্থনা, আবৃত্তি, নাটক, গান, ফানুস উত্তোলনসহ নানা কর্মসূচি। মেলায় ৪০ জন বিদেশি কবিসহ দেড় শতাধিক কবি অংশ নিচ্ছেন। ১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শেষ হবে আন্তর্জাতিক এই কবিতা মেলা।