মাগুরায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী তীর্থ রুদ্র (১৮) হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন তাঁর বন্ধু তায়হান হোসেন ওরফে আমান (২১)। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মাগুরার আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিতে তীর্থকে চেতনানাশক ইনজেকশন দেন ও কুপিয়ে হত্যা করেন। জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ এসব তথ্য জানিয়েছে।
মাগুরা পৌরসভার আল আমীন ট্রাস্ট মাদ্রাসাসংলগ্ন একটি পুকুরের পাড় থেকে গত মঙ্গলবার সকালে তীর্থ রুদ্রের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি পৌরসভার নান্দুয়ালী পশ্চিমপাড়া এলাকার নিমাই চন্দ্র রুদ্রর ছেলে। তাঁরা শহরের পুরাতন বাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তীর্থ এবার মাগুরা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন।
গ্রেপ্তার তায়হান হোসেন একই কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তায়হান মাগুরা শহরের হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা জিয়াউল ইসলামের (জিবলু) ছেলে। তায়হানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁর বাড়ি থেকে নিহত তরুণের মুঠোফোন ও মোটরসাইকেলের চাবি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া পৌরসভার কাশিনাথপুর এলাকায় তায়হানের খালার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পরে শহরের মোল্লাপাড়া এলাকা থেকে ওই মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাগুরা সদর আমলি আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবির আসামি তায়হান হোসেনের বক্তব্য রেকর্ড করেন। সেখানে তিনি হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে রাতে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে আজ রোববার সকালে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, “তীর্থ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আমানকে (তায়হান হোসেন) গতকাল আদালতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সে বলেছে, “তীর্থের মোবাইল ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিতে তাঁকে হত্যা করেছি। ইয়াবা সেবনের কথা বলে তীর্থকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাই। একই সঙ্গে উচ্চমাত্রার চেতনানাশক ইনজেকশন ও ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে আসি।” এ ঘটনায় তায়হান একাই জড়িত ছিল বলে আদালতে স্বীকার করেছে।’
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে মাগুরা শহরের আতর আলী সড়কের মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে থেকে তীর্থ রুদ্রর মোটরসাইকেলে ওঠেন তায়হান হোসেন। বিভিন্ন স্থান ঘুরে তাঁরা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আল আমীন ট্রাস্ট মাদ্রাসাসংলগ্ন পুকুরপাড়ে আসেন তাঁরা। সেখানেই তীর্থ রুদ্রকে ধারালো দা দিয়ে গলা ও চোয়ালে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাত ১০টার মধ্যেই এ ঘটনা ঘটেছে। তায়হানকে জিজ্ঞাসাবাদ ও শহরের বিভিন্ন সড়কের ওই সময়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তায়হান জানিয়েছেন, ঘটনার দিন (সোমবার) সকালের দিকে তিনি ভায়না মোড় এলাকার একটি ওষুধের দোকান থেকে উচ্চমাত্রার চেতনানাশক ইনজেকশন এবং দুপুরে আতর আলী সড়কের একটি দোকান থেকে ধারালো দা কেনেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) তৌফিক আনাম বলেন, ‘অভিযুক্ত তরুণ (তায়হান) নিজেকে বন্ধু প্রমাণ ও সন্দেহের বাইরে রাখতে নানা রকম কৌশল করেছে। মর্গ থেকে যখন নিহত তীর্থর লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে পরিবারের দুজন সদস্যের পাশাপাশি অভিযুক্ত তায়হান সই করেন। তিনি একাধিকবার পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছেন এবং নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন।’