২৭ বছর পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, আবেগাপ্লুত কেউ কেউ

বহু বছর পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁরা। রোববার খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি কলেজ মাঠেছবি: প্রথম আলো

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি কলেজ মাঠের এক কোণে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন। তাঁদের কেউ সাংবাদিক, কেউ কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক, আবার কেউ–বা ব্যবসায়ী। আড্ডার অন্যতম বিষয় ছিল ফেলে আসার দিনের স্মৃতি রোমন্থন। আড্ডায় ফিরে আসে সেই কলেজজীবনের নানা গল্প-ঘটনা। ২৭ বছর পর বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ও আবেগাপ্লুত ছিলেন কেউ কেউ।

আড্ডারত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য। তিনি ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের পরিকল্পনা সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯৭ সালে কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর এবারই প্রথম কলেজে এসেছি। নতুন-পুরোনো অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে। ২৭ বছর পর কলেজে এসে খুবই ভালো লাগছে। কলেজের অনেক পরিবর্তনও হয়েছে।’

নিজের বন্ধুদের পাশাপাশি নতুন–পুরোনো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আনন্দ আড্ডায় কাটে সময়। রোববার খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি কলেজ মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক গাজী মোমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এক বন্ধু মারা যাওয়ার পর একবার এসেছিলাম। এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এসেছি। ২৭ বছর পর অনেক বন্ধুর সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়েছে। কলেজ আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে। ২৭ বছরে একটি কলেজের যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, এখানে তা হয়নি।’

রোববার সকাল থেকে পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য ও মোমিন উদ্দিনের মতো বিভিন্ন ব্যাচের শত শত নতুন-পুরোনো শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর ছিল কপিলমুনি কলেজ প্রাঙ্গণ। পুরোনো বন্ধুবান্ধবকে অনেক দিন পর সরাসরি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। ছবি, ভিডিও, সেলফি আর আড্ডায় মেতে ওঠেন তাঁরা। স্বল্প সময়ের জন্য ফিরে যান সেই কলেজজীবনে।

২০০১ সালে কপিলমুনি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছিলেন তাপস সাধু। এখন এই কলেজেই শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তাপস সাধু বলেন, ‘কপিলমুনি কলেজটিতে একসময় পাইকগাছা উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতেন। অনেক শিক্ষার্থী এখন বড় বড় জায়গায় কাজ করছেন। নিজের বন্ধুদের পাশাপাশি এসব ছোট-বড় ভাইদের সংস্পর্শে আসতে পেরে ও তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’

আড্ডায় মেতেছেন বন্ধুরা। রোববার খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি কলেজ মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল বাংলা নববর্ষ থাকায় অনুষ্ঠানে ছিল বর্ষবরণের ছাপ। নারী-পুরুষের সাজেও ছিল ভিন্নতা। বর্ষবরণের মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, খুরমাসহ নানা পদ রাখা হয়েছিল খাদ্যতালিকায়। কপিলমুনি কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত পুনর্মিলনী, শিক্ষক সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও ওই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র মো. রশীদুজ্জামান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল। সভাপতিত্ব করেন কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ ও কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক এম নজরুল ইসলাম।