তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বরখাস্ত, মেয়রের সহকারীর পদত্যাগ

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে বরখাস্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কুমার দাশকে। একই দিন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী হোসেন আওরঙ্গজেব পদত্যাগ করেছেন।

আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে এই দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান নেতারা।

তাঁরা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এবং সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের ব্যাপারে মতামত উত্থাপন করেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের সচিব আশরাফুল আমিন ও প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি ও অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যর কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমীকে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেন, আন্দোলন চলাকালে ৩ থেকে ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের সব সড়কবাতি বন্ধ রাখা হয়। সড়কবাতি বন্ধ রেখে রাতের আঁধারে ছাত্র-জনতার ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়। গুলিও করা হয়। এতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কুমার দাশের নির্দেশে সড়কবাতি বন্ধ করা হয়। এ জন্য তাঁকে বরখাস্ত করতে হবে।

এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী হোসেন আওরঙ্গজেব আন্দোলন দমানোর জন্য ছাত্রলীগকে টাকা ও অস্ত্র দিয়েছেন। বহদ্দারহাটে মেয়রের বাড়ির সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী নিহত হয়েছেন। এ জন্য তাঁকে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানানো হয়।

তাঁদের দাবি মেনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত এবং হোসেন আওরঙ্গজেবের পদত্যাগ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে ঝুলন কুমার দাশের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর হোসেন আওরঙ্গজেব দাবি করেন, তিনি সরকারি চাকরি করেন। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তাই ছাত্রলীগকে অস্ত্র ও টাকা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর জোর করে একটি কাগজে তাঁকে সই করতে বলা হয়েছে। তাই সই করেছেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা আজ বেলা পৌনে তিনটায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে যান। এ সময় ঝুলন কুমার দাশ ও হোসেন আওরঙ্গজেবকে বরখাস্ত করার জন্য এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এসব দাবি মেনে নেন।

এ সময় সেখানে থাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমীর সঙ্গে সংস্থাটির বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতে থাকেন। আলোচনার প্রায় শেষ পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর পদোন্নতি যথাযথভাবে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন। এ জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেন এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বৃহস্পতিবার থেকে কার্যালয়ে না আসতে বলেন।

এটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ হয়। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী তখনই অফিস ছেড়ে যাওয়ার জন্য ওঠে দাঁড়ান। ছাত্রদের সিটি করপোরেশনের বিধিবিধান এবং কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে বৈঠকে থাকা অন্য সমন্বয়কেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনের সময় ৩ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সড়কবাতি বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং নির্যাতন চালানো হয়। এ দায়ভার সিটি করপোরেশনের প্রধান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) দায় এড়াতে পারেন না। আর নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে কোনো ধরনের পদোন্নতি না দিয়ে একজনকে প্রধান প্রকৌশলী করা হয়েছে। এ অনিয়মের সঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জড়িত। তাই তাঁকে কার্যালয়ে না আসতে বলা হয়। কিন্তু এটা বলার কারণে তাঁর মুঠোফোনে কেড়ে নেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ শাহীন-উল ইসলাম চৌধুরী।

তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। আর ৫ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে ছিলেন। তাই সড়কবাতি বন্ধ রাখার বিষয়ের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত নন। তিনি আরও বলেন, ‘আর ছাত্ররা বলছেন, আন্দোলনের সময় গুলি চালানোর অর্ডার (আদেশ) নাকি আমি দিয়েছি। এর দায়ভার আমাকে নিতে হবে। আমি গুলি চালানোর অর্ডার দেওয়ার কে?’