সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ছাত্রদের জন্য আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই

কলেজটিতে আবাসনসংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দুটি ছাত্রীনিবাস থাকলেও ছেলেদের জন্য নেই কোনো আবাসনব্যবস্থা।

মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের দুটি ছাত্রাবাসের মধ্যে একটি অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়ার পর তা সরিয়ে ফেলা হয় প্রায় ১০ বছর আগে। করোনার সময় বহিরাগতদের মাদক সেবন ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের জন্য অপর ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এ কারণে কলেজটিতে আবাসনসংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দুটি ছাত্রীনিবাস থাকলেও ছেলেদের জন্য নেই কোনো আবাসনব্যবস্থা। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা বাড়তি অর্থ খরচ করে মেস ও বাসা ভাড়া করে বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আলীমুল হক ছাত্রাবাসের প্রধান ফটকে তালা। ভেতরে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ছাত্রাবাসের বাইরে ঝোপঝাড় এবং আগাছায় ভরে গেছে। এর উত্তর পাশে কলেজের জায়গায় মঞ্জুরুল আলম ছাত্রাবাসের জন্য প্রস্তাবিত স্থান লেখাসংবলিত সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।

দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার অনেক ছাত্র এই কলেজে পড়েন। কলেজে আবাসিক ব্যবস্থা থাকলে দরিদ্র পরিবারের এসব শিক্ষার্থীরা অল্প খরচে পড়ালেখার সুযোগ পেতেন।
জাফর ইকবাল, সহকারী অধ্যাপক, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ
মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের আলীমুল হক ছাত্রাবাস প্রায় পাঁচ বছর ধরে বন্ধ। ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে চারপাশ। গত মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কলেজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪২ সালে ২৩ দশমিক ৭৯ একর জমির ওপর কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা। ১৯৮০ সালের ১ মার্চ কলেজটি সরকারি হয়।

১৯৬৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি এবং পরের বছর ডিগ্রি পাস কোর্স চালু হয়। কলেজটিতে একাদশ, দ্বাদশ, ডিগ্রি পাস কোর্সসহ বর্তমানে ১৭টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৪টি স্নাতকোত্তর বিষয় রয়েছে। কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৮৫৩। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪০৯ জন ছাত্র এবং ১৩ হাজার ৪৪৪ জন ছাত্রী পড়ালেখা করছেন।

ছাত্রদের আবাসিক সমস্যা দূর করতে ১৯৪৭ সালে কলেজসংলগ্ন উত্তর পাশে টিনের দুটি ঘরে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। পরে এর নামকরণ করা হয় মঞ্জুরুল আলম ছাত্রাবাস। ২০০৯ সালের ২ মার্চ ছাত্রাবাসটি পুড়ে যায়। এরপর থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ছাত্রাবাসটি অপসারণ করা হয়।

১৯৯১ সালে কলেজের পশ্চিম পাশে দোতলা আলীমুল হক ছাত্রাবাস করা হয়। ১৪টি কক্ষে ৫৬ জন ছাত্রের ব্যবস্থা ছিল ওই ছাত্রাবাসে। তবে পরবর্তী সময়ে গাদাগাদি করে শতাধিক ছাত্র থাকতেন। করোনা মহামারির সময়ে ছাত্রাবাসে বহিরাগত ছেলেদের উৎপাত, মাদকের আসর বসানো এবং অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রাবাসে থাকা ছাত্ররা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বলেন, কলেজে আবাসিক ব্যবস্থার এই নাজুক পরিস্থিতির কারণে অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় মেস এবং বাসা ভাড়া করে থাকছেন। এতে তাঁদের বাড়তি অর্থ খরচ হওয়ায় অনেকে কঠিন অবস্থায় পড়েছেন।

জেলা শহরের উত্তর সেওতা এলাকার একটি মেসে থাকেন কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের ছাত্র ইসরাফিল হোসেন বলেন, প্রতি মাসে তাঁদের পাঁচজনের ৫ হাজার টাকা মেসভাড়া, গ্যাস ও রান্নার লোকসহ খাবারের জন্য প্রায় ২১ হাজার টাকা খরচ পড়ে যায়। কলেজের ছাত্রাবাসে থাকলে এর অর্ধেক অর্থ খরচ হতো। এ ছাড়া মেস থেকে কলেজে যাতায়াতেও রিকশাভাড়া লাগে।

কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, জেলার তিনটি উপজেলার নদীভাঙন–কবলিত দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার অনেক ছাত্র এই কলেজে পড়েন। কলেজে আবাসিক ব্যবস্থা থাকলে দরিদ্র পরিবারের এসব শিক্ষার্থীরা অল্প খরচে পড়ালেখার সুযোগ পেতেন। এ ছাড়া ছাত্রাবাসে নিরাপত্তার পাশাপাশি সময় এবং যাতায়াতের কষ্টও লাঘব হতো।

সাধারণ ছাত্রদের পাশাপাশি এই আবাসনসংকট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা। ২০১৯ সালে সংগঠনের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাসেল আহমেদ বলেন, দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।

অথচ কলেজের ছাত্রদের আবাসনব্যবস্থা নেই। এতে চরম ভোগান্তি ও কষ্টের মধ্যে রয়েছেন ছাত্ররা। আবাসনসংকট দূর করতে আলীমুল হক ছাত্রাবাসটি খুলে দেওয়ার পাশাপাশি মঞ্জুরুল আলম ছাত্রাবাস নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিয়ে এসব আসবাব সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।