বিচারকের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যের আপত্তিকর বক্তব্য, প্রতিবাদে মানববন্ধন

কক্সবাজারে আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ারের আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে আইনজীবীদের মানববন্ধন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করায় কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার (কমল) বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন আইনজীবীরা। জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আজ মঙ্গলবার ওই মানববন্ধন হয়।

কয়েকজন আইনজীবী বলেন, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ারের ওই আপত্তিকর বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় আদালত ও আদালতের বিচারকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। একজন সংসদ সদস্যের মুখে এ ধরনের অশ্লীল ও আপত্তিকর বক্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটা আদালত অবমাননার শামিল। দ্রুত ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে বিবৃতি দেওয়া না হলে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হবে।

মানববন্ধনে শতাধিক আইনজীবী অংশ নেন। মানববন্ধনে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আমির হোসেন বলেন, সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ারের এমন বক্তব্য বরদাশত করার মতো নয়। মানুষের আশা-ভরসার আশ্রয়স্থল হলো আদালত। মানুষ নিজের অধিকার ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন। স্বাভাবিকভাবে একটি মামলা করায় আদালতের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদর্শন করেন সংসদ সদস্য, যা খুবই নিন্দনীয়। আইনজীবীরা এসব হুমকির বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্ছার থাকবেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী আবদুর রহিম বলেন, ‘আমরাও আইনের মানুষ। তিনিও (সংসদ সদস্য) আইনপ্রণেতা হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি (সংসদ সদস্য) যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে মনে হচ্ছে আমরা মগের মুল্লুকে বসবাস করছি। বিচারককে ভাত খেতে দেবেন না, চাকরি করতে দেবেন না—এ অধিকার তাঁকে (সংসদ সদস্যকে) সংবিধান বা সরকার দেয়নি। তাই এ কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে এবং ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় আইনজীবীরা বসে থাকবেন না।’

আইনজীবী রিদুয়ান আলী বলেন, ‘আমরা আজকে এজলাসে না থেকে রাজপথে নেমেছি একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।’

উল্লেখ্য, ১১ মার্চ রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ারের একটি ভিডিও বক্তব্য ভাইরাল হয়। ভিডিওতে সাইমুম সরওয়ারকে বলতে দেখা যায়, ‘রামুর একজন শিক্ষক জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হলো। আমি (সাইমুম) জজ সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনা মিথ্যা, কোনো ঘটনা নাই। জমিজমা নিয়ে গন্ডগোল, সেখানে কোনো মারামরি ঘটে নাই, কোনো ভিডিও ফুটেজ নাই, সাক্ষী নাই। কিন্তু একজন পেশকার জজ সাহেবকে ম্যানেজ করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দিয়েছেন। আমি বেঁচে থাকতে তাঁকে (শিক্ষককে) জেলে যেতে দেব না। তাঁকে যদি জেলে যেতে হয়, আমি বেঁচে থাকতে যে জজ সাহেব সেই মিথ্যা মামলা করেছেন, তাঁকে আমি জীবনে ভাত খেতে দেব না। তাঁকে আমি চাকরি করতে আর দেব না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামুতে শিক্ষকদের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের একপর্যায়ে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার এসব কথা বলেছিলেন।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব আইনজীবী মাঠে নেমে মানববন্ধন করেছেন, তাঁরা এক মাস আগেও ওই জজ সাহেবকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কিছুদিন আদালত বর্জন করেছিলেন।

এ ব্যাপারে সাইমুম সরওয়ার বলেন, ‘বর্তমান জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সাহেব অত্যন্ত সফল একজন বিচারক। যিনি এক বছরে আট হাজার মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এ রকম একজন আইন প্রয়োগকারী (জজ) থাকার পরও যদি আমার এলাকার একজন প্রধান শিক্ষক, একজন সাংবাদিক, একজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, তিনজন ব্যবসায়ী এবং দুজন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়, তাহলে একজন আইনপ্রণেতা হিসেবে আমাদেরও তো কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাঁদের (অভিযুক্তদের) বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দেশীয় অস্ত্রশন্ত্রে সজ্জিত হয়ে মারধর করে তিন লাখ টাকার মালামাল লুট করে ভাঙচুর করেন। অথচ হাজার হাজার মানুষ বলেন, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই। কোনো মারামারিও হয় নাই। বাগ্‌বিতণ্ডাও হয় নাই। রামু থানার পুলিশ দুই পক্ষ নিয়ে বসেছিল, দুই পক্ষের জমির খতিয়ান আছে। দুই পক্ষের মালিকানা আছে। দুই পক্ষকে জমি ভাগ করে নিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রায় দেন। কিন্তু বাদীপক্ষ সেই রায় অমান্য করে আদালতে মামলা করলেন। মাননীয় আদালত সেটি তদন্তে না গিয়ে মামলা হিসেবে রুজুর নির্দেশ দিলেন।’