সেতুর ওপর অবৈধ দোকান

সেতুর ওপর সারা দিন দোকান সাজিয়ে বসলে ১০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। পুলিশ ও পৌরসভার নামে এ চাঁদা তোলা হয় বলে অভিযোগ করেন দোকানিরা।

বগুড়া শহরের করতোয়া নদীতে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ ফতেহ আলী সেতুর এক পাশে দোকান বসে। এতে যানজট লেগেই থাকে। গত মঙ্গলবার শহরের চেলোপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া শহরের ফতেহ আলী সেতুর ওপর বসে সারি সারি দোকান। সেখানে হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। অথচ চার বছর আগে ফতেহ আলী সেতু ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। প্রতিদিন দোকানিদের কাছ থেকে তোলা হচ্ছে চাঁদা।

গত মঙ্গলবার বিকেলে ও সোমবার রাতে সরেজমিনে দেখা গেছে, করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত ফতেহ আলী সেতুর দুই পাশে সিমেন্টের তিন-চারটি খুঁটি পুঁতে ভারী যানবাহন পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে খুঁটির মাঝখানের ফাঁকা পথ দিয়ে রিকশা-অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও সাইকেল চলাচল করছে।

সোমবার রাতে দেখা যায়, সেতুর এক পাশে অর্ধেক জায়গা দখল করে বসেছে সারি সারি দোকান। আছে আপেল, কমলা, পাকা পেঁপে, কলার মতো মৌসুমি ফলের দোকান। আরও আছে কাঁচা শাকসবজি ও তরকারির দোকান। বসেছে কাঁচা ও সেদ্ধ ডিম এবং মাছের দোকান। দইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দুজন ফেরিওয়ালা। এমনকি ইঁদুর আর আরশোলা মারার ‘ম্যাজিক ওষুধ’ নিয়ে বসেছেন একজন হকার। কারও কারও মাথার ওপরে আছে রঙিন বড় ছাতা। সেতুর ওপর দোকানপাট বসায় সরু হয়েছে চলাচলের পথ। রিকশা-অটোরিকশা থামিয়ে কেউ কেনাকাটা করছেন। ফলে সেতুর ওপর থেমে থেমে যানজট তৈরি হচ্ছে।

রিকশাচালক মাসুদ আলী বলেন, ‘বিয়ানবেলা থ্যাকে রাত ১০টা-১১টা, বিরিজের ওপর অর্ধেক জায়গায় দোকান বসায়। রিকশা লিয়ে বিরিজত ওঠলে দিনে–রাতে জ্যাম লাগে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন দোকানি বলেন, সেতুর ওপর দোকান সাজিয়ে বসলে চাঁদা দিতে হয়। পুলিশ ও পৌরসভার নামে এ চাঁদা তোলা হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসলে ৫০ টাকা আর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বসলে ৫০ টাকা দিতে হয় দৈনিক। আর সারা দিন বসলে ১০০ টাকা দিতে হয়।

সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক খোরশেদ আলম বলেন, সেতুর ওপর বসা দোকানপাট তুলে দিয়ে আসার পর ফের সেখানে দোকান বসে। কোনোভাবেই দোকানপাট বসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে দোকান থেকে টাকা তোলার অভিযোগ সত্য নয়।

ফতেহ আলী বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ফতেহ আলী সেতু দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ পারাপার হয়। গাবতলী, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার লোকজন এ সেতু পারাপার হয়ে প্রতিদিন নানা কাজে জেলা শহরে যাতায়াত করেন। আবার শহরের চেলোপাড়া, নারুলী, নাটাইপাড়া, সাবগ্রাম ও আকাশতারা এলাকার লোকজনকে এ সেতু পার হয়ে শহরে যেতে হয়। স্কুল-কলেজে যাতায়াত ছাড়াও ফতেহ আলী বাজার ও রাজাবাজারে কেনাকাটা কিংবা সরকারি-বেসরকারি দাপ্তরিক প্রয়োজনে প্রতিদিন সেতু পার হতে হয়। ফলে এসব দোকানের জন্য প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে করতোয়া নদীর ওপর ৬১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের ফতেহ আলী সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুর আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় ২০১৮ সালে ফতেহ আলী সেতুকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়। তখন সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।

সওজ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ফতেহ আলী সেতু ভেঙে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। পুরোনো সেতুর ওপর দোকানপাট বসা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা পৌরসভার। নতুন সেতু নির্মাণের পর সেতুর ওপর দোকানপাট বসা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ওই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে শুধু রিকশা-সাইকেলের মতো হালকা কিছু যান চলাচল করছে। সেতুতে অবৈধ দোকান বসা বন্ধ করতে পৌরসভার পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি। দোকানিদের কাছ থেকে ‘মাসোয়ারা’ তোলায় পৌরসভার দু-একজন কর্মী জড়িত বলে শুনেছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।