সেচ–সংকটে আমনের আবাদ বন্ধ ৪৫০০ হেক্টর জমিতে

  • এ মৌসুমে প্রকল্পটির বেড়িবাঁধের ভেতর প্রায় আট হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ।

  • গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে বৃষ্টিপাত ও সেচের অভাবে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষিজমিতে চলতি মৌসুমে আমনের আবাদ করতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকেরা। এতে তাঁরা হতাশ। তাঁদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ সেচের ব্যবস্থা না করায় এ সমস্যা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে গত ১৫ জুলাই আমন আবাদের চলতি মৌসুম শুরু হয়। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর আবাদের ওই মৌসুম শেষ হবে। এ মৌসুমে প্রকল্পটির বেড়িবাঁধের ভেতর প্রায় আট হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়। বাকি ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি এখনো অনাবাদি। এবার বাঁধটির ভেতরে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় ৩৯ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে গত ১৫ জুলাই চলতি মৌসুম শুরু হয়। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর আবাদের ওই মৌসুম শেষ হবে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে ফতেপুর, লুধুয়া, রসুলপুর, শাহাবাজকান্দি, ঠেটালিয়া, সিপাইকান্দি, গজরা, দুর্গাপুর, ওটারচর ও ছেংগারচরসহ আরও কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার বেশি ও মাঝারি উঁচু কৃষিজমি আবাদহীন পড়ে আছে। বৃষ্টিপাত ও সেচের অভাবে ওই জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে আছে। শক্ত মাটিতে কৃষকেরাও সেখানে আমনের আবাদ করতে পারছেন না। অনেকটা বিরানভূমি বা খিলখেতের মতো পড়ে আছে যেসব জমি। যেগুলোয় আমনের আবাদ হয়েছে, সেচের অভাবে সেগুলোর চারাগাছও মরে যাচ্ছে।

ফতেপুর এলাকার কৃষক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, অনেক দিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। পাউবোর লোকেরাও জমিতে পানির সেচ দিচ্ছে না। সেচের অভাবে তাঁর প্রায় ৬০ শতাংশ জমি ফেটে চৌচির হয়ে আছে। মৌসুম শেষ হতে চললেও সেখানে আমনের আবাদ করতে পারছেন না। বীজতলায় আমনের চারাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাঁর এলাকার আরও অনেক কৃষক আমন রোপণ করতে পারছেন না এ কারণে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষ সেচের ব্যবস্থা না করায় এ সমস্যা হয়েছে। শিগগির পানিসেচের ব্যবস্থা বা বৃষ্টি না হলে এ মৌসুমে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাবে। এ নিয়ে হতাশা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ফতেপুর, ঠেটালিয়া ও সিপাইকান্দি এলাকার পানি ব্যবহারকারী দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী অভিযোগ করে বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষ সেচের ব্যবস্থা না করায় কৃষকেরা আমন লাগাতে পারছেন না। সমস্যাটির সমাধান না হলে অনেক কৃষক বিপাকে পড়বেন। এ ব্যাপারে পাউবোর দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে দায়িত্বরত চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রুহুল আমিন বলেন, সাধারণত বছরের এ সময় বৃষ্টি হয়। জমিতে সেচ দেওয়ার দরকার হয় না। সেচখালগুলোও সেচের জন্য প্রস্তুত থাকে না। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত নেই। এ জন্য কৃষকদের কথা ভেবে বেড়িবাঁধের ভেতরের জমিতে সেচ দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছেন। পাউবোর বিরুদ্ধে সেচ না দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।