কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বন্ধ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সংসদ সদস্য মজিবুল হক ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমানের অনুসারীদের সংঘর্ষে এক তরুণকে রামদা হাতে দেখা যায়। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায়ছবি: এম সাদেক

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কুমিল্লা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই সংঘর্ষ হয়।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি এবং বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান। একই সময়ে মহাসড়কের পাশে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার এলাকায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য মুজিবুল হকের অনুসারীরাও সভা ডাকেন। গতকাল রাত থেকে মিজানুর রহমানের অনুসারীরা চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকায় অবস্থান নিয়ে দোয়েল চত্বর, পাইলট স্কুল, চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, বাজার ও হাসপাতাল এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বাঁশের কঞ্চি, কাঠের গুঁড়ি নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন তাঁরা।

অন্যদিকে সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুজিবুল হকের অনুসারীরা মহাসড়কের পাইলট স্কুল এলাকায় এসে জড়ো হন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে চৌদ্দগ্রাম পাইলট স্কুলের সামনের সড়কে দুই নেতার অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় কয়েকজন আহত হন। পরে সংঘবদ্ধ হয়ে সাবেক মেয়র মিজানুর রহমানের অনুসারীরা মুজিবুল হকের অনুসারীদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এ সময় তাঁরা মুজিবুল হকের মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নেতা-কর্মীরা মহাসড়ক ত্যাগ করলে যান চলাচল শুরু হয়।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সংসদ সদস্য মজিবুল হক ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমানের অনুসারীদের সংঘর্ষে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু মোটরসাইকেল। আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায়
ছবি: এম সাদেক

সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের লালবাগ এলাকায় আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি উপকমিটির সদস্য এম তমিজ উদ্দিন ভূঁইয়া সেলিমের গাড়ি ভাঙচুর করেন মুজিবুল হকের অনুসারীরা।

বেলা ১১টার দিকে মহাসড়কের পাশে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার এলাকায় দেখা যায়, মুজিবুল হকের মঞ্চের সামনে ভাঙা চেয়ার পড়ে আছে। মহাসড়কে ইটের টুকরা। মিজানুর রহমানের অনুসারীদের হাতে কাঠের গুঁড়ি, বাঁশের কঞ্চি। পরে মিজানুর রহমান ও শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদারের নেতৃত্বে সেখানে একটি মিছিল হয়।

সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘মুজিবুল হক আমাদের বাধা দিয়েছেন। পাল্টা কর্মসূচি দেন। আমরা তো জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিই। উনি লোকজন দিয়ে বাধা দিতে এলে আমরা তাঁদের প্রতিহত করি।’

সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বলেন, ‘ওরা আমাদের মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করেছে। জামায়াত-বিএনপির এজেন্টরা এই কাজ করেছে।’

হাইওয়ে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে যানজট হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যান চলাচল স্বাভাবিক করার।’