সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
‘মানহীন’ খাবার খেতে হয় মাসে ২০ দিন
ডাইনিংয়ের খাবারের মান বাড়াতে গত জানুয়ারিতে হল কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ছাত্রীরা। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
মোটা চালের ভাত ও স্বাদহীন তরকারি। পরিমাণে দেওয়া হয় কম। মাছ বা মাংসের টুকরাও খুব ছোট। অনিচ্ছা থাকলেও মাসের অন্তত ২০ দিন তিন বেলা এমন নিম্নমানের খাবার খেতে হবে। তা না হলে আবাসনসুবিধা বাতিল করার বিধান রয়েছে। এতে পুষ্টিচাহিদা পূরণ না হওয়ায় অনেক ছাত্রী স্বাস্থ্যগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। বারবার হল কর্তৃপক্ষকে বলার পরও সমাধানে নেওয়া হচ্ছে না কোনো উদ্যোগ।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ১৬ জন ছাত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয়। সবাই একই অভিযোগ করেন। তবে নাম প্রকাশ করতে চাননি তাঁদের কেউ। ওই ছাত্রীদের ভাষ্য, ডাইনিংয়ের খাবারের মান বাড়াতে এবং হলের খাবার বাধ্যতামূলকভাবে ২০ দিন খেতে হবে বলে যে বিধান রয়েছে, তা বাতিলের দাবিতে গত জানুয়ারি মাসে হল কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষ তখন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও পরে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে লেখালেখিও করেন তাঁরা।
তবে হলের খাবারের মান অনেক ভালো বলে মনে করেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রাধ্যক্ষ আনজুমান আরা। তিনি দাবি করেন, ছাত্রীরা হলের খাবার খেয়ে নয়, বাইরে ফুচকা, চটপটিসহ বিভিন্ন খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন।
প্রাধ্যক্ষের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি হলের মধ্যে ছেলেদের হল পাঁচটি ও মেয়েদের দুটি। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৫৪০ জনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। তবে এখন প্রায় ৬০০ ছাত্রী থাকেন। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জন ছাত্রী ডাইনিংয়ে তিন বেলা খান। এ জন্য তাঁদের প্রতিদিন জনপ্রতি ৬০ টাকা দিতে হয়। ছাত্রীদের মধ্য থেকে একেকজন পর্যায়ক্রমে হলের ডাইনিং পরিচালনা করে থাকেন। টাকা উত্তোলন, বাজার করাসহ যাবতীয় কাজ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রী। এ ক্ষেত্রে দুজন সহকারী প্রাধ্যক্ষ তাঁকে সহযোগিতা করেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে হল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আবাসিক ছাত্রী নাহিদা আক্তার। অল্প কয়েকজন ছাত্রী ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে’ খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রচারণা চালাচ্ছেন দাবি করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হলে তিন বেলা মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয়। মাছ, মাংস, সবজি, ভর্তাসহ নানা খাবার রাখা হয়। বাবুর্চিকে তিনি সঠিকভাবে চাল, ডাল, সবজি, মাছ, মাংসসহ যাবতীয় পণ্য কিনে দেন। এখন বাবুর্চি যদি সঠিকভাবে রান্না ও পরিবেশনের কাজটি না করেন, তাহলে তাঁর কী করার আছে।
জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ আনজুমান আরা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ৬০ টাকা দিয়ে তিন বেলা খাবার পরিবেশন করা একটু কঠিন। তবে ভাতের মান নিয়ে সম্প্রতি যে প্রশ্ন উঠেছে, তা খতিয়ে দেখে কিছুটা ত্রুটি পেয়েছি। ওই সময় যে চাল এসেছে, তার মান কিছুটা খারাপ ছিল। তবে এখন তা দূর হয়েছে।’
লোকবলের সংকটের কারণে হল পরিচ্ছন্ন রাখা ও ডাইনিং পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করেন প্রাধ্যক্ষ আনজুমান আরা।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলটির একাধিক ছাত্রী বলেন, জানুয়ারি মাসে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর সাময়িকভাবে বিষয়টি তদারকি করেছিল হল কর্তৃপক্ষ। কিছুদিন পর আবারও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন শুরু হয়। অধিকাংশ সময় রান্না করার পর ভাত থেকে বাজে গন্ধ বের হয়। নিয়মিত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করা হয় না। তরকারিতে মাছের আঁশ ও ভাতে গন্ধ থাকে। ডাইনিংয়ের পরিবেশ নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন। নিয়মিত এ খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক ছাত্রী। পেটব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে তাঁদের প্রায়ই চিকিৎসা নিতে হয়।